কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসা চাঙা  

কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসা চাঙা  

কক্সবাজার প্রতিনিধি ● কক্সবাজারের পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্থানীয় হোটেল, পরিবহন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো জমজমাট ব্যবসা করছে। প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এ বছর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আসা শুরু হওয়ার পর তাদের সহায়তা কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে মৌসুমের সুবাতাস পেতে শুরু করেন কক্সবাজার ও টেকনাফের হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা।

বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও দেশীয় বিভিন্ন বড়-ছোট সংস্থার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে নিযুক্তদের সাময়িক আবাসস্থল হয়ে উঠেছে কলাতলীসহ পুরো কক্সবাজারের হোটেলগুলো। ৫ তারকার মানের হোটেলসহ ভালমানের অনেক হোটেলে বুকিং পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে বলে সরেজমিনের দেখা গেছে।

গত ২৫ আগষ্টের পরে দেশে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করলে তা সারাবিশ্বের নজরে আসে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে সেখানে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজার শহর থেকে ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে হওয়ায় কর্মীরা সারাদিন কাজ করে বিকেল ও রাতে ফিরে আসছেন কক্সবাজার শহরে। কর্মব্যস্ততা আর ক্লান্তি দূর করতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে গা ভিজিয়ে নিতেও ভুলছেন না তারা। সমুদ্র সৈকতের একদম পাশে অবস্থিত হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের রেসিডেন্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই হোটেলে অতিথিদের আসার হার বেশ বেড়েছে। আমরা সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর হোটেলের সংস্কার কাজ করে থাকি, যাতে সিজনে অতিথিদের সুবিধা হয়। তবে এবার বেশ তাড়াহুড়ো করে সংস্কার কাজ শেষ করেছি। গত বছরের এসময়ের সঙ্গে চলতি বছরের তুলনা করলে এখন শুধু আমাদের হোটেলে না, পুরো কক্সবাজারের হোটেলগুলোতেই দেশি-বিদেশি অতিথিদের সমাগম বেশি। বিকেলে ও সন্ধ্যায় আমাদের বার-বি-কিউ ও রেস্টুরেন্টেও অনেক অতিথি আসছেন।

কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলের পার্কিং, শহরের ব্যস্ত সড়ক, মেরিন ড্রাইভসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে উন্নয়ন সংস্থার গাড়ি চোখে পড়ে অহরহ। এছাড়া দলবেঁধে দেশী-বিদেশী উন্নয়ন কর্মীদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। তবে শুধু উন্নয়ন সংস্থা না, দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ জনগণ নিজেদের উদ্যোগে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। তারা ত্রাণ বিতরণ শেষে অতিরিক্ত দুয়েকদিন থাকায় স্থানীয় হোটেল ও পর্যটন ব্যবসায় চাঙ্গাভাব লক্ষ করা গেছে।

কক্সবাজারের কলাতলীতে অবস্থিত বিচ ভিউ রিসোর্টের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহবুব হোসাইন সুমন বলেন, সেপ্টেম্বরের পর থেকেই আমাদের এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। আজকেও আমাদের হোটেলের রুম প্রায় ৯৫% ভর্তি, এর মধ্যে অনেকেই বিদেশী। বিদেশী অতিথিরা বেশির ভাগই রোহিঙ্গা কার্যক্রম নয়তো স্থানীয় ব্যবসায়ের কাজে এসেছেন। প্রথম দিকে রোহিঙ্গা কার্যক্রমের জন্য বিদেশী অতিথিরা বড় বড় হোটেলগুলোতে থাকলেও পরিস্থিতি অনেক লম্বা হওয়ায় তারা সবমানের হোটেলেই কমবেশি থাকতে শুরু করেছেন। তারা তাদের নিয়মিত কাজের ফাঁকে কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ঘুরেও দেখছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজের অবসরে দুপুরের খাবারের জন্য উখিয়া বাজারের রেস্টুরেন্টগুলোতে উন্নয়ন ও ত্রাণকর্মীদের ঢল নামে। স্থানীয় বাজারগুলোতে ফল-সবজি থেকে শুরু করে স্থানীয় বিভিন্ন খাবারের বিক্রিতে সন্তুষ্ট হোটেল মালিক ও দোকানিরা।

স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে যথেষ্ট নিরাপত্তা থাকায় ক্যাম্প ও কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বেশ স্বাচ্ছন্দে কাজ ও ঘুরে বেড়াতে পারছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। হঠাৎ করে পর্যটকের চাপে স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ীরা তাদের ভাড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ভূক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *