কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ৩৩ ক্যাম্পে ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ১২০০ ঘর

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ৩৩ ক্যাম্পে ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ১২০০ ঘর

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভারী বৃষ্টিতে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক হতাহত ছাড়াও অন্তত এক হাজার ২০০ বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে আগামী ২/৩ দিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কারণে আবারো পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে মাইকিংসহ প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ে বসবাসকারী সরিয়ে নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রশাসনের একাধিক দল মাঠে নেমেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ঝুঁঁকিপূর্ণ এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।

কক্সবাজারে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে ৬৩ মিলিমিটার। কখনো ভারী, আবার কখনো মাঝারি আকারের বৃষ্টির কারণে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচটি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন স্থানীয় বাসিন্দা ও অপর ৯ জন রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত উখিয়ার ১, ৮, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা দেয়া জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে প্রায় ৭ হাজার ৭৯৪ জন শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যার মধ্যে আনুমানিক এক হাজার ১৯১টি আশ্রয়ণ ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও ভূমি ধসে শিক্ষকেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, মসজিদ, ল্যাট্রিন, পানির উৎস এবং গোসলখানার মতো অবকাঠামোগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গারা বলছেন, একদিনের ভারী বৃষ্টিতে এতো বেশি প্রাণহানি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এর আগে ঘটেনি। ক্যাম্পগুলোতে এখনো অসংখ্য রোহিঙ্গা পরিবার পাহাড় ও ঢালুতে ঝুঁঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। নিরাপদ বসবাসের ব্যবস্থার দাবি তাদের।

এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবার পাহাড় ধসের আগে থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঝুঁঁকিপূর্ণ ছিল। ইতিমধ্যে ক্যাম্পে ঝুঁঁকিপূর্ণ পাঁচশত পরিবার ও বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আরো যারা ঝুঁঁকিপূর্ণ আছে তাদেরও সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলার পাশাপাশি আগামী ২/৩ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে দাতাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত
কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, বিশ্ব শরণার্থী দিবসে বাংলাদেশের আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্কট নিরসনে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে দাতা দেশগুলো।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জাপান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডসহ ১৬টি দেশ একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, সঙ্ঘাত, সহিংসতা ও দমন-পীড়নের কারণে সারা বিশ্বে ১২ কোটি উদ্বাস্তুর সাথে আমরা একত্মতা প্রকাশ করছি। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের বেশী রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রয়োজনের সময়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেয়ায় আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। বিরুপ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের অসাধারন সহনশীলতা ও শক্তিশালী চেতনাকে আমরা সম্মান জানাই।
দীর্ঘ মেয়াদে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা, মর্যাদাসম্পন্ন ও টেকসই প্রত্যাবাসনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সঙ্ঘাত ও অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি নিকট ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি ও সীমান্তের বাইরে তার প্রভাব নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা সব বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছি।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আরো ভালো ও মর্যাদাসম্পন্ন জীবনমান নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য আঞ্চলিক সমন্বয় ও সমন্বিত প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব।

Related Articles