কনকনে শীতে বৃষ্টি নিয়ে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

কনকনে শীতে বৃষ্টি নিয়ে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশজুড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন ও কনকনে শীতল পরিবেশ বিরাজ করছে বেশ কিছুদিন ধরেই। কোনো কোনো অঞ্চলে টানা সাত দিনেও মেলেনি সূর্যের দেখা। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বুধবার রাত থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত দেশের পাঁচ বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর মেঘ ও কুয়াশা পরিষ্কার হয়ে গেলে নিয়মিতই সূর্যের দেখা মিলবে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের যেসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গতকাল মঙ্গলবার অধিদপ্তর দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ বুধবার রাতের পর বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। পরদিন শুক্রবার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, ‘আগামীকালও (আজ) দেশের সব জায়গায় সূর্যের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

তবে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দেশের কোনো কোনো জায়গায় সূর্যের দেখা মিলতে পারে। বুধবার (আজ) মধ্যরাত থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে খুলনার প্রায় সব জেলায়ই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সেটা আরো বিস্তৃত হয়ে বরিশাল, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু অঞ্চল এবং ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের জেলাগুলোতে হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।’

কাজী জেবুন্নেছা বলেন, আকাশে মেঘ জড়ো হচ্ছে। আকাশে মেঘ থাকলে দিনের তাপমাত্রা আবদ্ধ অবস্থায় থেকে যায়, বের হয়ে যেতে পারে না।

ফলে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে। ফলে আজ ও কাল শীতের অনুভূতি কিছুটা কমবে। বৃষ্টির পর রাতের তাপমাত্রা কমবে। তবে বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে দিনে সূর্যের আলো আসবে পৃথিবীতে। ফলে শীতের অনুভূতি গত কিছুদিনের মতো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা কম।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা জানান, এ ধরনের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক কিছু না। এর আগে জানুয়ারি মাসে টানা ১৩ দিনও এ রকম কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি ছিল। ১৯৯৮ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকায় তাপমাত্রা ৬.৫ ডিগ্রিতে নামার রেকর্ডও রয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখনো ১৩ ডিগ্রির নিচে নামেনি। ৩০ বছরের গড় বিবেচনায় দেশে জানুয়ারি মাসের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৫ ডিগ্রি। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ের কাছাকাছি বা গড়ের চেয়ে বেশিই রয়েছে।

অন্যদিকে স্বাভাবিকের তুলনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখনো অঞ্চলভেদে ১ থেকে ৯ ডিগ্রি কম আছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মানুষের মধ্যে শীতের অনুভূতি বেড়েছে মূলত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণেই। যেহেতু সূর্য উঠছে না এবং কুয়াশা থাকছে, তাই শীতের অনুভূতি বেশি আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে আগের দিন দেশের পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি) বয়ে গেলেও গতকাল তা কোথাও ছিল না। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি। তবে দু-এক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে অধিদপ্তর সেটাকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে না।

১০ ডিগ্রির আশপাশে তাপমাত্রা ছিল দেশের আরো কিছু অঞ্চলে। বান্দরবানে ১০.২, নওগাঁর বদলগাছীতে ১০.৩, বগুড়ায় ১০.৪, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ১০.৭ ও বরিশালে ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামগ্রিকভাবে অঞ্চলভেদে গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৭ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে। অন্যদিকে সর্বোচ তাপমাত্রা ছিল ১৪ থেকে ২৭ ডিগ্রির মধ্যে।

আজ বুধবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। শনিবার থেকে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেই বন্ধ স্কুল-কলেজ

গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিগুলোতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকায় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাবে, সেসব জেলায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নিতে হবে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, এই শীতের মৌসুমে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলেও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। এমন খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও এ আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *