পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসিম কুমার তালুকদার এই অঞ্চলে জিএম হয়ে আসার পর থেকে অব্যাহতভাবে চলন্ত ট্রেনে নিজেই অভিযান চালান। এসব অভিযানে যে অর্থ আদায় হয় তার দুই ভাগের এক ভাগও আদায় হয় না অভিযানের বাইরে অন্য সময়ে। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ সময়ে ট্রেন থেকে যে টাকা আদায় হয়, তার বেশির ভাগই লুটপাট করা হয়। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, ট্রেনের দায়িত্বরত দৈনন্দিন কর্মকর্তারা জোর করে ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করতে পারেন না।
যেটি পদের ক্ষমতাবলে করতে পারেন জিএম।
ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ধূমকেতু ট্রেনে গত ১৭ নভেম্বর অভিযান চালান জিএম অসিম কুমার তালুকদার। ওই দিন সেই ধূমকেতুতে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করা ১২৮ জন যাত্রীর কাছ থেকে ৩৭ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন তিনি। অথচ একই ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে কোনো অভিযান না থাকায় আদায় হয় মাত্র ১০ হাজার টাকার কিছু বেশি।
এর আগে ১৪ নভেম্বর খুলনা থেকে ঈশ্বরদীগামী চিত্রা এক্সপ্রেস টেনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান জিএম। ওই দিন সেই ট্রেন থেকে ১২ হাজার ৮১০ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করেন তিনি, যা চিত্রা ট্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জরিমানাসহ ভাড়া আদায় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাঁরা আরো জানান, যখন ট্রেনের টিটি, গার্ড বা পরিচালকরা স্বাভাবিক দায়িত্বে থাকেন, তখন চলন্ত ট্রেন থেকে টাকা আদায় দেখানো হয় অর্ধেকের কম।
রেলওয়ের বাণিজ্য শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সাধারণ সময়ে ট্রেন থেকে যে টাকা আদায় হয়, তার বেশির ভাগ হয় লুটপাট।
আবার সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য অনেক ট্রেনযাত্রীই টিকিট না কেটে ট্রেন ভ্রমণ করেন। তাঁদের কাছ থেকে ট্রেনের দায়িত্বরত দৈনন্দিন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জোর করে ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করতে পারেন না। যেটি পদের ৎক্ষমতাবলে করতে পারেন জিএম।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র মতে, জিএম অসিম কুমার তালুকদার গত ১২ নভেম্বর রাজশাহী থেকে খুলনাগামী কপোতাৎক্ষ ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ১২১ জন টিকিটবিহীন যাত্রীর কাছ থেকে ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। এটিও ওই ট্রেনে সম্প্রতি সর্বোচ্চ জরিমানা আদায়।
এর আগে ৩ নভেম্বর রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ১৬২ জন যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করা হয় ২৪ হাজার ৫১৫ টাকা। এটিও আদায় করেন জিএম অসিম কুমার তালুকদার। অথচ এই ট্রেন থেকে কখনোই পাঁচ হাজার টাকার বেশি জরিমানাসহ ভাড়া আদায় দেখাতে পারেননি টিটিরা। অথচ স্বাভাবিকভাবে এই ট্রেন থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় দেখানো হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার নিচে আদায় হয় না বলেও জানিয়েছেন দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জরিমানাসহ ভাড়া লুটপাট সম্পর্কে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল ভুঁইয়া বলেন, সাধারণ সময়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে, সে কারণে টিকিটবিহীন যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় অর্ধেকরও কম হয়। তবে জিএম স্যার গেলে দ্বিগুণ টাকা আদায় হয়।
জিএম অসিম কুমার তালুকদার বলেন, সাধারণত ট্রেনে যেসব যাত্রী থাকেন, তার মধ্যে অনেকেই থাকেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। এই যাত্রীদের অনেকেই টিকিট কাটতে চান না। প্রতি ট্রেনে ২৫ থেকে ৩০ জন এমন যাত্রী পাওয়া যায়। কিন্তু টিটি বা গার্ডরা তাঁদের কাছ থেকে জরিমানা তো দূরের কথা টিকিটের টাকাও আদায় করতে পারেন না। ফলে টাকা আদায় কম হয় অন্য সময়ে। আবার কিছু টাকা তছনছও হয় আমি না থাকলে।