কর্মসংস্থান সংকট কাটিয়ে অর্থনীতির গতি ফেরাতে হবে

কর্মসংস্থান সংকট কাটিয়ে অর্থনীতির গতি ফেরাতে হবে

কর্মসংস্থান সংকট কাটিয়ে অর্থনীতির গতি ফেরাতে হবে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভয়াল করোনা বিশ্বের সব কিছু যখন থমকে গিয়েছে বাংলাদেশও তেমনি। করোনা নতুনভাবে চড়াও না হলে হয়তো মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে দেশ। কর্মসংস্থানের সংকট স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে এখন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ২৬ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বেকারত্বের হার ছিল ২০১০ সালে, ২০ লাখ। ২০১২ সাল ও ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ লাখ ও ২৮ লাখে। সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ৩০ লাখে উঠবে। বাস্তবে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। যাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টাও মজুরির বিনিময়ে কোনো কাজ পান না, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও তাঁদের বেকার হিসেবে চিহ্নিত করে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর আমাদের শ্রমবাজারে যে ২১-২২ লাখ তরুণ-তরুণী যুক্ত হয়, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কাজ পায় না। আবার যারা কাজ পায়, তাদেরও একটা বড় অংশ অর্ধবেকার বা ছদ্মবেকারের জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। কেননা, তারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পায় না। গত ১০ বছরে কৃষি খাত, নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। এদিকে করোনাভাইরাসের ভয়াল আগ্রাসনের মধ্যেও বাংলাদেশের টিকে থাকার সাফল্য চোখে পড়ার মতো। ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি। ঘনবসতির এই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কত তা নিয়ে বড় মাপের বিতর্ক থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজারের কাছাকাছি। জনসংখ্যার বিচারে বহির্দুনিয়ার তুলনায় এ সংখ্যা যে বেশ সীমিত তা অস্বীকার করার জো নেই। তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ মহামারী যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে অর্থনীতির মহাধস থামানো সম্ভব হলেও এখনো চাঙ্গা হয়নি ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানা।

সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরলেও কর্মীদের মধ্যে নেই স্থিরতা। ইতিমধ্যে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য। বড় বড় শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কোথাও কোথাও কমানো হয়েছে বেতন-ভাতা, আবার কোথাও কমানো হয়েছে কর্মী সংখ্যা। নিজেদের লোকসান ঠেকাতে আর প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে কোনো কোনো ব্যাংকও কর্মী ছাঁটাই করছে, বেতনও কমিয়েছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। নতুন কোনো কর্মী নিয়োগ তো হচ্ছেই না, বরং পুরনোদের ধরে রাখতে উদ্যোক্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি খাতে চলছে ব্যয় সংকোচন নীতির বাস্তবায়ন। সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নতুন কর্মী নিয়োগ আগের মতো হচ্ছে না। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে জনশক্তি রপ্তানি। গত ১০ মাসে ৩ লাখ কর্মীও বিদেশে যেতে পারেনি। অথচ আগের বছরের একই সময়ে অন্তত ১০ লাখ কর্মী দেশের বাইরে গিয়েছিলেন কাজের উদ্দেশে। সবচেয়ে দুঃসংবাদের খবর হলো, করোনাকালে অন্তত ১২ লাখ শ্রমিক বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। যাদের মধ্যে মাত্র ২ লাখ তাদের আগের কর্মস্থলে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

অন্যদের ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। করোনাকালীন দুর্যোগ মোকাবিলায় দুনিয়ার উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সাফল্য অন্যদের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে। প্রশংসনীয় এই অবস্থানকে ধরে রেখে কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর বাড়ানো উচিত। অপচয়ের সব পথ বন্ধ করে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় ঠেকাতে অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে উদ্যোগী হতে হবে বলেই আমরা মনে করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *