কর্মস্থলে ফিরছেন পুলিশ সদস্যরা, ১২ নির্দেশনা আইজিপির

কর্মস্থলে ফিরছেন পুলিশ সদস্যরা, ১২ নির্দেশনা আইজিপির

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় টানা তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে নিজ নিজ ইউনিটের দায়িত্বে ফিরতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা।

সদ্য যোগ দেয়া বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) মো: ময়নুল ইসলাম গত বুধবার পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেসব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন তাদের আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দলের নেতারা, ছাত্র-ছাত্রী এবং জনসাধারণ যাতে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে কর্মস্থলে আসতে পারেন সেজন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতর থেকে ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়েছে, পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে আসার পথে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে সেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। সুতরাং গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করা হলো।

এদিকে পুলিশের সব খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গুলির হিসাব করা এবং বাহিনীর সদস্যদের সবরকম সমিতি-অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থগিত করাসহ পুলিশ সদস্যদের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো: ময়নুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নৈরাজ্যের মধ্যে সারা দেশে থানায় হামলা এবং বিপুলসংখ্যক পুলিশের হতাহতের ঘটনায় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে এ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়েই এসব নির্দেশনা দেন নতুন আইজিপি।

জানা যায়, চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ইউনিটের কর্মকর্তা ও ফোর্সকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো: ময়নুল ইসলাম। তবে বেশির ভাগ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান করলেও থানা পর্যায়ে অনেকেই যোগদান করেননি বলে সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় ওয়ারী থানায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্য জানান, আমরা কর্মস্থলে ফিরতে চাই। কিন্তু থানায় গিয়ে আমরা কোথায় বসবো। দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে থানায়। সেখানে এখন ভাঙ্গা এবং পোড়া জিনিস ছাড়া কিছুই বাকি নেই। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ ঘিরে পুলিশের ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন নবনিযুক্ত আইজিপি। সেই সাথে এই আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় যেসব ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তার প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
পুলিশের চেইন অব কমান্ড ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয় আদেশে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-

১. রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিওএম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), সব মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইন্সসহ অন্য সব পুলিশ ইউনিটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোর্সের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২. ঢাকা মহানগর পুলিশের রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিওএম, এপিবিএন, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, সব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষায়িত সব পুলিশ ইউনিটের সব অফিসার এবং ফোর্সকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে।

৩. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে এবং হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্সদের স্ব স্ব ইউনিটের পুলিশ লাইন্সে যোগ দিতে হবে।

৪. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপারেশন্স কন্ট্রোল রুম সক্রিয় করা, দায়িত্ব বণ্টন করা এবং সারা দেশের সাথে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৫. ফোর্সের মনোবল বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের দাফন/সৎকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. পুলিশের সব অস্ত্র-গুলির হিসাব, খোয়া/হারানো অস্ত্র-গুলির হিসাব, সিসি (কমান্ড সার্টিফিকেট)সহ সব ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে।

৮. সব অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় গার্ড অতিসত্বর মোতায়েন করতে হবে। সিনিয়র অফিসাররা পুলিশ রেগুলেশন্স অনুযায়ী অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা, অস্ত্র-গুলি ইস্যু ও জমাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রার লেখার বিষয়ে বিদ্যমান বিধিবিধান পালন নিশ্চিত করবেন।

৯. মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপাররা নিজ নিজ এলাকার জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটি থানা এবং থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপৎকালীন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

১০. থানার সব অফিসার ও ফোর্সের ব্যক্তিগত হেফাজতে থাকা অস্ত্র-গুলি স্ব স্ব পুলিশ লাইন্সে বা নিকটস্থ অস্ত্রাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

১১. বাংলাদেশ পুলিশের সব সমিতি এবং অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

১২. শৃঙ্খলার স্বার্থে সব স্তরের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত, দলীয়, ব্যাচ, সমিতি, অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে পুলিশের কার্যক্রমসংক্রান্ত কোনো প্রকার বিবৃতি, দাবি, মন্তব্য বা প্রত্যুত্তর করতে পারবে না। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।

Related Articles