কলকাতার ঈদবাজারে ভিড় বাংলাদেশি ক্রেতাদের

কলকাতার ঈদবাজারে ভিড় বাংলাদেশি ক্রেতাদের

ঝড়-বৃষ্টি কিছু নেই কলকাতায়। রয়েছে কাঠফাটা রোদ। গরমে প্রাণ আইঢাই। রোদের তেজে রাস্তায় পা ফেলাও কঠিন। তবে রোদের এই তেজ বাধা দিতে পারেনি কলকাতার ঈদবাজারে। ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই বেশি। ঈদুল ফিতর যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। সস্তায় কেনাকাটা করতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্যগুলো থেকেও লোকজন আসছেন।

1
সন্তোষপুরে ঈদ বাজারে ক্রেতারা কাপড়চোপড় দেখছেন

 

সেই ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট, শিয়ালদহ থেকে রাজাবাজার বা বেলগাছিয়া-পার্ক সার্কাস থেকে এন্টালি-খিদিরপুর—সব জায়গার বিপণিবিতানের একই চিত্র। এই বিপণিবিতানগুলোতে তৈরি পোশাক থেকে প্রসাধন সামগ্রী, টুপি-আঁতর থেকে অলংকার কিংবা জুতার দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লেগে আছে।

3
নিউমার্কেটের ফুটপাথে ঈদের বাজার

নজরকাড়া ডিজাইন আর সস্তা হওয়ায় এসব পণ্য কিনতে কলকাতার বাজারে চলে এসেছেন বলে বাংলাদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ঢাকার গুলশানের এনামুল হকের সঙ্গে দেখা কলকাতার একটি মানি এক্সচেঞ্জে। টাকা ভাঙাতে এসেছিলেন তিনি। গুলশান রেখে কলকাতায় কেন? জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘কলকাতায় এসেছি ঈদের বাজার করতে। আমাদের কাছে এই শহরের একটি আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। হরেক রকমের জিনিস পাওয়া যায়। এগুলোর দামও বেশ কম।’

ইফতারের পরে ভিড় আরও বেড়ে যায়। ইফতারের আগে সকালের দিকে অনেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। অনেকে আবার ইফতারের পর ধীরেসুস্থে সেরে নিচ্ছেন ঈদের কেনাকাটা। তাই বিকেল হলে ভিড় বেড়ে যায় কলকাতার বিভিন্ন এলাকার ইফতারির বাজারেও। নানা ধরনের মজাদার খাবার সাজিয়ে রাখা হয় এই ইফতারির বাজারে।আর নিউমার্কেটজুড়ে তো বাংলাদেশিদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। গত বছরের চেয়ে এবার ভিড় যেন আরও বেশি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভারতের ১০০০ ও ৫০০ রুপির নোট বাতিলের ঘটনার পর গতবার ঈদের বাজারে ভিড় একটু কম ছিল। এবার তাই উল্টো চিত্র।

নিউমার্কেট, সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট, এসএন ব্যানার্জি রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের হোটেলপাড়ায় এখন শুধু বাংলাদেশি ক্রেতাদের দেখা মিলছে। তাঁদের ভিড়ের কারণে এসব এলাকার আবাসিক হোটেলে তাই সহজে মিলছে না হোটেলকক্ষ। খুব কষ্টে মিললেও ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে দুই-তিন গুণ বেশি।

আবদুস সোবহান নামের এক বাংলাদেশি বলেন, ‘দিল্লি, আজমির, জয়পুর, আহমেদাবাদসহ ভারতের অনেক শহরে ঘুরেছি। কিন্তু কলকাতায় সাধারণ মানের হোটেল ভাড়া এখন অনেক বেশি।’

নিউমার্কেটের ফুটপাথে কৃত্রিম গয়না কিনছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শারমিন আখতার। বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ‘কাপড়চোপড়ের দাম এখানে সস্তা। ঢাকায় দাম প্রচুর। এখানকার এক পিস চুড়িদার এক হাজার রুপিতে পাওয়া যায়। সেটা আমাদের দেশে তিন হাজার টাকারও বেশি। তাই কলকাতায় প্রতিবছর ঈদের বাজার করতে চলে আসি।’চিৎপুরে ধর্মীয় বই ও ফ্রেমের দোকান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জির

শ্রীলেদার্স জুতোর দোকানে কথা হয় বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ারের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন সঙ্গে। তিনি জানান, শ্রী লেদার্স থেকে এক ডজন জুতো কিনে ফেলেছেন। শ্রী লেদার্সের কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ হাজরা বললেন, তাঁর দোকানের ৭০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন।

এদিকে ঈদ সামনে রেখে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে ছেড়েছে নানা পণ্য। বিভিন্ন নামী কোম্পানিও ঈদের বাজার ধরার জন্য পণ্যের দামে নানা ধরনের ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। পার্কস্ট্রিট, রাজাবাজার, চিৎপুর, মেটিয়াব্রুজ, খিদিরপুর, বেলগাছিয়া, ধর্মতলার বাজারের ভিড় ছেড়ে অনেকে হাজির হচ্ছেন গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জসহ শহরের বিভিন্ন শপিং মলে। পার্ক সার্কাস, মল্লিক বাজার, খিদিরপুর, রাজাবাজার, বেলগাছিয়ার মুসলিম এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে বড় বড় তোরণে ‘ঈদ মোবারক’ ব্যানার টাঙিয়ে সব মানুষকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

কলকাতার নামী ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদ জাকারিয়া স্ট্রিটের নাখোদা মসজিদ। এই মসজিদসংলগ্ন কলকাতার বৃহৎ পাইকারি বাজার বড় বাজার। তাই এই চত্বর এখন জমজমাট। সব দোকানেই উপচেপড়া ভিড়। মসজিদের পাশে দোকানে টুপি-আঁতর থেকে নানা ধরনের সেমাই পাওয়া যায়।রাজাবাজারে ইফতারির জন্য শরবত বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জির

 

___________________

patheo24/105

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *