কলকাতার খিদিরপুরে দুই ধর্মের সহাবস্থান

কলকাতার খিদিরপুরে দুই ধর্মের সহাবস্থান

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পাশেই একসঙ্গে বসবাস হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা শিব ও মুসলিমদের খোয়াজ খিজির পীরের। দুই ধর্মের সহাবস্থানে গড়ে উঠেছে কলকাতার আমদানি রপ্তানি ব্যবসার কেন্দ্র খিদিরপুর। কিন্তু কেন এই অঞ্চলের নাম এলা খিদিরপুর? জানা গেছে দুই ধর্মাবলম্বীরা বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করার ইতিহাস রয়েছে।

খিদিরপুর ব্রিটিশ ভারত এর সূচনা কাল থেকেই গুরুত্ব পেয়ে আসছে। ব্রিটিশরা সেখানে একটি আধুনিক সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলে। তারপর এলাকাটির দ্রুত উন্নয়ন ঘটে ও কর্ম চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এখনো এই বন্দরটি চালু রয়েছে কলকাতা বন্দর নামে।

এ অঞ্চলে কাজের খোঁজে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ চলে আসে। ফলে অঞ্চলটিতে অবাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে হিন্দি ভাষা বহুলপ্রচলিত। খিদিরপুরে কলকাতা বন্দরের দুটি ডক অবস্থিত। এই ডক দুটি হলো খিদিরপুর ডক ও নেতাজি সুভাষ ডক।

জানা গেছে, খিদিরপুর নামটির উৎসের সঙ্গে শিবপুর বোটানিকাল গার্ডেনের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। শিবপুর বোটানিকাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন রবার্ট কিড। তার ছেলে জেমস কিড ১৮০৭ সালে এই অঞ্চলে একটি ডক প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত ভূকৈলাস রাজবংশের জমিতেই তৈরি হয় এই ডক। জেমস কিড-এর নামানুসারে জায়গাটির নাকি নামকরণ হয় ‘কিডারপুর’।

কেউ কেউ বলছেন, মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী জলসাম্রাজ্য তথা দরিয়ার পিরের নাম খাজা খিজির। ফার্সিতে যা ‘খিজির’ উচ্চারণ, আরবিতে তা ‘খিদ্‌র’। এই খাজা খিজির বা ‘খাজা খিদ্‌র’-এর নাম থেকেই নাকি এসেছে খিজিরপুর তথা খিদিরপুর।

গঙ্গার তীরবর্তী ওই অঞ্চলের সবুজ বনানী ও তৃণক্ষেত্র দেখে জায়গাটির নাম হয়েছে ‘খিদিরপুর’ এটি মোটেই কল্পনার নয়, কেননা খিদিরপুরের পাশেই রয়েছে গার্ডেনরিচ। সবুজ গাছপালায় সমৃদ্ধ বাগানবাড়ির জন্য এই গার্ডেনরিচ একসময় ইংরেজ রাজপুরুষদের খুব প্রিয় জায়গা ছিল। তাই ‘খিদিরপুর’-এর আসল অর্থ হয়তো সবুজ বনানী ও তৃণক্ষেত্র সমৃদ্ধ নগর। কারণ আরবিতে খিদির অর্থ সবুজ। আবার খয়েরের শুদ্ধ নাম হলো ‘খদির’। খয়েরের ব্যবসা ছিল বলে হয়তো জায়গাটির নাম হয়েছে ‘খদিরপুর’।

খিদিরপুরের ব্যুৎপত্তিতে আররেকটি বিষয় আছে। আরবি ভাষায় যা ‘খিঞ্জির’, বাংলায় তাকে বলে শুয়োর। গবেষক সুকুমার সেন লিখেছেন– ‘খিঞ্জিরপুর’ থেকেই নাকি এসেছে ‘খিদিরপুর’। অর্থাৎ একসময় গঙ্গা তীরবর্তী এই জায়গাটিতে শুয়োরের প্রাধান্য ছিল। ডক সংলগ্ন এলাকায় শুয়োরের প্রাচুর্য থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *