পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ২০২৪ সাল লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। তাই ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। আগামীকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বইমেলার সার্বিক আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে বইমেলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন) ও বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাসান কবির ও বইমেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নওবদ আলী।
আয়োজকরা জানান, বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান : ভলিউম-২’ সহ কয়েকটি গ্রন্থ-উন্মোচন করবেন। এদিন তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও প্রদান করবেন।
বইয়ের এ উৎসবে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট আয়তনের মাঠে ৬৩৫ প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০ প্রতিষ্ঠান ১৭৩ ইউনিট এবং সোহরওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫ প্রতিষ্ঠান ৭৬৪ ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। গত বছরের মতো রমনা কালী মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০০ বই। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে।
বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। মেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা রয়েছে।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক : বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্ন ও বিতর্কে সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি বলেন, এ পুরস্কারটি যেহেতু বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ দেয় তাই পরিষদ এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক আচরণের যে অভিযোগ এনেছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের পর থেকে একাডেমিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে থাকে। তখন পরিষদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় দেখা যায়, ভোটার সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেল। বাংলা একাডেমির ফেলো, সদস্যরা এ নিয়ে আপত্তি জানালেন। তারা এ নির্বাচনি প্রক্রিয়া সংশোধনের জন্য বলেন। পরে এ প্রক্রিয়াটি নানা বিতর্কে স্থগিত থাকে। নির্বাচনের বিধিমালা ও ভোটার তালিকা প্রণয়নের বিষয়টি এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে।
বাংলা একাডেমির মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তার জবাবে তিনি বলেন, অনেক আবর্জনার ভেতর থেকেও আমরা ভালো মানের লেখা খুঁজে পাই। বাংলাদেশে সাহিত্য চর্চা এখন অনেক বেড়েছে। কম বয়সি অনেক লেখক ভালো ভালো পুরস্কার পাচ্ছেন।