কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমছে, ভাঙন বাড়ছে

কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমছে, ভাঙন বাড়ছে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি সমতলে কমতে শুরু করেছে। উজানে ও জেলায় ভারী বৃষ্টি না থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি কমলেও আজ শনিবার সকালে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে নদ-নদীর ভাঙন।

আজ সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, জেলার প্রধান নদ-নদীর মধ্যে ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে চিলমারী পয়েন্টে ৮৮ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদের পানি কমে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়ন, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও যাত্রাপুর ইউনিয়নে নদীভাঙনে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব এলাকার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ইতিমধ্যে ভাঙনের কবলে বসতভিটা হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয়ণ প্রকল্প ও বিদ্যালয়ের মাঠে ঠাঁই নিয়েছেন।

আজ সকালে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর ও ভগবতীপুর এলাকা ঘুরে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের ভাঙনের চিত্র দেখা গেছে। কয়েকটি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার চিত্রও চোখে পড়ে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু জিও ব্যাগ নদীর তীরে থাকলেও সেসব স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে নদীভাঙন ও স্রোতের তোড়ে জিও ব্যাগ ভেসে যেতে দেখা যায়।

ঘোগাদহ ইউনিয়নের চরে নদীভাঙনে এক সপ্তাহে ৩০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী, চড়ুয়াপাড়া, তেলিপাড়া ও গাজীরপাড়ায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক মাসে ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

চরের বাসিন্দা রহিম বাদশা বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে গঙ্গাধর নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরের প্রায় ৩০টি বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে চরের পাঠশালা, একটি মাদ্রাসা ও ঈদগাহ মাঠ। নিজের জমাজমি নেই। নদের ভাঙনে বসতঘর স্কুলের মাঠে নিয়ে তুলেছেন। সেখানে এক ঘরেই ছেলেমেয়ে ও গরু-ছাগল নিয়ে থাকছেন। চারদিকে বন্যার পানি; প্রস্রাব-পায়খানা করার মতো জায়গা নেই। থাকা–খাওয়া নিয়ে আছেন অনেক কষ্টে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, জেলায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় ভাঙন রোধে পাউবোর লোকজন কাজ করছেন। দ্বীপচর ও নদীর মাঝের কোনো চরাঞ্চলে পাউবো কোনো কাজ করে না। সেখানে ভাঙন রোধে কাজ করার সুযোগও নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, শুকনা খাবার যেখানে দরকার, সেখানে দেওয়া হচ্ছে। নদীভাঙন এলাকায় কাজ করার জন্য পাউবোকে বলা হয়েছে।

Related Articles