কুরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম
আদিল মাহমুদ : কুরবানি আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের বড় একটি মাধ্যম। ঈদুল আজহার দিনে আমরা কুরবানি দিয়ে থাকি। যদিও এ ছাড়া আরও দুদিন কুরবানি দেয়া যায়। আমরা অনেক অন্যকে দিয়ে কুরবানিটা দিই। তবে যদি আপনি নিজের কুরবানির পশু নিজেই জবাই করতে পারেন, তাহলে ‘নূরুন আলা নূর।’ কিন্তু শুধু পশু জবাই করলেই হবে না, আপনাকে অবশ্যই কুরবানির পশু জবাই করার নিয়ম জানতে হবে।
কুরবানির পশু জবাই করার নিয়ম হচ্ছে, যে ব্যক্তি কুরবানি দিবেন, তিনি নিজের কুরবানির পশু নিজেই জবাই করতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। যদি তিনি ভালোভাবে জবাই করতে পারেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কুরবানির পশু নিজেই জবাই করেছেন। আর কুরবানির পশু জবাই করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। সে জন্যে প্রত্যেকের নিজের কুরবানি নিজে জবাই করার চেষ্টা করা উচিত।
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন নিজেদের হাতে নিজেদের কুরবানির পশু জবাই করেন। [ফাতহুল বারী ১০/২১]
কুরবানির পশু নিজে জবাই না করতে পারলে অন্য কারো মাধ্যমে জবাই করা জায়েয আছে। কেননা সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেষট্টিটি কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করে বাকিগুলো জবাই করার দায়িত্ব আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অর্পণ করেছেন। [সহীহ মুসলিম- ১২১৮]
কুরবানির পশু জবাই করে ফেলবো তাই এর উপর কোনো জুলুম করবো না। কুরবানির পশুর সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। এমনভাবে কুরবানি করার চেষ্টা করতে হবে যাতে কুরবানির পশু কষ্ট না পায়। হাদীসে এসেছে, শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’টি বিষয় আমি মুখস্থ করেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন কুরবানির পশু জবাই করবে তখন সুন্দরভাবে জবাই করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয়, আর যে পশুটাকে জবাই করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। [সহীহ মুসলিম-১৯৫৫]
কুরবানির পশু জবাই করে ফেলবো তাই এর উপর কোনো জুলুম করবো না। কুরবানির পশুর সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। এমনভাবে কুরবানি করার চেষ্টা করতে হবে যাতে কুরবানির পশু কষ্ট না পায়
কুরবানির পশু জবাই করার সময় তাকবীর ও বিসমিল্লাহ বলবে। যেমন হাদিসে এসেছে, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে দুম্বাটা জবাই করলেন এবং বললেন, বিসমিল্লাহি ওয়া আল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে। [আবু দাউদ: ২৮১০]
অন্য একটি হাদীসে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি শিংওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন। [সহীহ বুখারী]
কুরবানির পশু জবাই করার সময় যার পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দো‘আ করা জায়েয আছে। এভাবে বলা, ‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।’ যেমন হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দুম্বা জবাই করার সময় বললেন, আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন। [মুসলিম- ১৯৬৭]
কুরবানির পশু জবাই করার সর্বােত্তম সময় হচ্ছে, ঈদের নামাজ আদায় ও খুতবা শেষ হওয়ার পর পশু জবাই করা
কুরবানির পশু জবাই করার সর্বােত্তম সময় হচ্ছে, ঈদের নামাজ আদায় ও খুতবা শেষ হওয়ার পর পশু জবাই করা। কেননা হাদীসে এসেছে, জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন ঈদের নামাজ আদায় করলেন, অতঃপর খুতবা দিলেন, তারপর কুরবানির পশু জবাই করলেন। [সহীহ আল-বুখারী: ৯৮৫]
লেখক : তরুণ আলেম