পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কেবল বিপ্লব করে, অস্ত্র ও তলোয়ারের মাধ্যমে ইকামতে দীন—আলা মিনহাজিন নবুয়্যাহ কায়েম করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, সাইয়্যিদ মাওলানা আসআদ মাদানী (রহ.) এর খলীফা, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
তিনি বলেন, ইকামতে দীন বা দীন প্রতিষ্ঠা করার দুটি পদ্ধতি। এক.দাওয়াত, দুই. খেদমতে খালক। আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের প্রথম চল্লিশ বছর খেদমত করেছেন। চল্লিশ বছর দাওয়াত দিয়েছেন। তারপর মদীনায় হিজরত করে দাওয়াত ও খেদমতের পাশাপাশি বিশেষ প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছেন। নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের দাওয়াত ও খেদমতের মাধ্যমেই মদীনায় খেলাফত কায়েম হয়েছে।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপি তরবিয়তি ইজতেমার দ্বিতীয় দিন দুপুরে ইসলাহি বয়ানে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এসব কথা বলেন।
দুনিয়াতে যারা উম্মতকে কাজের লক্ষ্য বানিয়েছেন, মানুষকে আখিরাতমুখী করার পেছনে কাজ করেছেন, তারাই সফল উল্লেখ করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা দুই ধরণের মানুষ পাঠিয়েছেন। এক ধরণের লোক মানুষের ময়দানে কাজ করাকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়েছেনে। কিভাবে মানুষকে আল্লাহমুখী বানানো যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। যেমন আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম। আরেক দল লোক এমন আছে, যারা ক্ষমতা অর্জনকে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। যেমন যুগে যুগে ফেরআউনের মতো লোকেরা ক্ষমতা, নেতৃত্ব ও জাগতিক বিষয়গুলোকে নিজেদের লক্ষ্য বানিয়েছিল। এই দুই দলের মধ্যে যারা মানুষের মাঝে কাজ করেছেন, তারাই সফলকাম। আর যারা ক্ষমতা, অর্থ ও নেতৃত্বের পেছনে ছুটেছে তারা ব্যার্থ।
ক্ষমতায়ন যদি আসল ইসলাম হতো, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেতেন জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, মক্কার কাফেরদের সর্দাররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অর্থকড়ি, নারী ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে রাসূলের দীনের দাওয়াতকে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পেয়ারে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বলেছিলেন, আমার কিছুই চাই না, তোমরা শুধু বলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রস্তাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন নাই। যদি ক্ষমতা লাভ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার নামই ইসলাম হতো, তাহলে তিনি সেদিন ক্ষমতা গ্রহণ করতেন।
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলতে গিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম বলেন, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ক্ষমতা লাভ করার জন্য প্রতিষ্ঠা হয় নাই, রাজনীতি করার জন্য প্রতিষ্ঠা হয় নাই, ব্যবসা করার জন্য প্রতিষ্ঠা হয় নাই। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কাজের ক্ষেত্র কী?-তা জানাতে গিয়ে সংগঠনটির চেয়ারম্যান বলেন,
আমরা ফেরআউন, নমরুদের মতো হব না। আমরা আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামের মতো মানুষের ময়দানে কাজ করবো। মানুষকে আল্লাহমুখী করার জন্য আপ্রাণ ত্যাগ ও চেষ্টা চালিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, নিজের সমঝকে আকাবীর ও আসলাফের সমঝের উপর ন্যাস্ত করতে হবে। কারণ আকাবীর ও আসলাফরা দীনকে এর সঠিক মর্মে বুঝতে পেরেছেন, যেই মর্মে দীনকে সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বুঝেছিলেন। আকাবীর ছাড়া আমরা দীনকে সঠিকভাবে বুঝতে পারবো না। তাই আমরা দীন শিখবো আকাবীরের কাছ থেকে।
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার নেতৃবৃন্দ, কর্মী ও সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, আমাদেরকে কোরআন ও হাদীস বুঝতে হবে এবং নেক ও এক হতে হবে। নেক হওয়ার জন্য ৫টি কাজ করতে হবে। তা হলো-
১. দাওয়াত
২. তালিম
৩. তাযকিয়া
৪. জিহাদ
৫. ইনফাক ফী সাবী লিল্লাহ
এক হতে হলে ৩টি কাজ করতে হবে। তা হলো-
১. দিলের (অন্তরের) সাথী আল্লাহ তাআলাকে বানাতে হবে
২. আমলের সাথী রাসূলকে বানাতে হবে
৩. সাহাবায়ে কেরামকে চলার সাথী বানাতে হবে
বাড়ি ফিরে সংগঠনের সবাইকে ৩টি জিকিরের মজলিস করার আহ্বান জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, আমরা দৈনন্দিন, সাপ্তাহিক ও মাসিক এই ৩টি জিকিরের মজলিস করবো। বাসা-বাড়িতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় পরিবার-পরিজনকে নিয়ে আল্লাহর জিকির করবো। প্রতি সপ্তাহে মহল্লার মসজিদে বা বাসা বাড়িতে একটি জিকিরের মজলিস করবো এবং প্রতি মাসে আল্লাহর নাম নিয়ে সফর করবো।
তরবিয়তি ইজতেমার দ্বিতীয় দিন সুবহে সাদিকের সময় জিকির, বয়ান ও দুআ করেন রংপুরের পীর, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সহসভাপতি মাওলানা হুসাইন আহমদ। ‘বাতিল প্রতিরোধে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা’ শিরোনামে আলোচনা করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা দেলওয়ার হুসাইন সাইফি। ‘সমাজ বিনির্মাণে আকাবিরে দেওবন্দ’ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী। ‘বর্তমান সময়ের দাবিতে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার প্রাসঙ্গিকতা’ নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমী। ‘সিয়াসাত ও আকাবিরে দেওবন্দ’ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর সহ সভাপতি মাওলানা ইব্রাহিম শিলস্থানী।
আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহের জন্য শান্তি কামনা করে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের মোনাজাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত দুইদিন ব্যাপি তরবিয়তি ইজতেমা শেষ হয়।
আরও পড়ুন: মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানি দায়িত্ব : আল্লামা মাসঊদ