কেমন হলো মোদির তৃতীয় মেয়াদের শরিকনির্ভর মন্ত্রিসভা

কেমন হলো মোদির তৃতীয় মেয়াদের শরিকনির্ভর মন্ত্রিসভা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ গ্রহণ করলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর কাটানোর পর তার শরিকনির্ভর তৃতীয় ইনিংস যে কিছুটা আলাদা হবে, তা আন্দাজ করেছিলেন অনেকেই। শপথ গ্রহণের দিনও সেই ছবি ফুটে উঠল মন্ত্রিসভার কাঠামোতে।

দেশ-বিদেশের আট হাজার অতিথিকে সাক্ষী রেখে রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় দিল্লির রাইসিনা হিলসে অনুষ্ঠিত হয় এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। যেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রপ্রধানরাও। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জগন্নাথ এবং সিশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ ছাড়াও আরো অনেকে।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ছাড়াও শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রী এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীরা। তবে এবার লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় দিল্লির মসনদে শরিকনির্ভর এই মন্ত্রিসভা, যেখানে ৭২ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১১ জন শরিক দলের।

‘ভারসাম্য’ বজায় রেখে জোট সরকারের অন্তর্গত তেলুগু দেশম পার্টি, জনতা দল ইউনাইটেড, শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী), লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস), জনতা দল সেকুলার, রাষ্ট্রীয় লোক দল, হিন্দুস্তানি আওয়ামী মোর্চা (এইচএএম), রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া থেকে বেছে নেয়া হয়েছে এই ১১ জন মন্ত্রীকে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্ত্রিসভায় রয়েছে পুরানো এবং নতুন মুখ। রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ী, জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, শিবরাজ সিং চৌহান, নির্মলা সীতারামন, এস জয়শঙ্করের মতো পুরানো মুখ। যদিও পূর্ববর্তী সরকারের তিন পরিচিত মুখ স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর এবং রাজীব চন্দ্রশেখর এবার ঠাঁই পাননি মন্ত্রিসভায়।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রোববারের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে শপথ পাঠ করেছেন ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী, পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী। এদিকে, মন্ত্রিসভার বণ্টনকে কেন্দ্র করে শরিকদের মধ্যে ‘মতভেদ’ স্পষ্ট হয়েছে ইতোমধ্যে।

অজিত পাওয়ারের এনসিপির নেতা প্রফুল প্যাটেলকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদ দেয়ার কথা জানানো হয়েছিল বিজেপির পক্ষ থেকে। যদিও সেই পদ নিতে চাননি প্রফুল প্যাটেল। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাই বিজেপির পক্ষ থেকে তাকে এখন যে পদ গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে তা ‘অবনতির’ সমান বলে মনে করছেন প্রফুল প্যাটেল।

মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেন যারা
শরিকদের ‘সন্তুষ্ট’ করতে মূলত অঞ্চলভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের ওপর জোর দিয়েছে বিজেপি। যার ফলে মন্ত্রিসভায় ২৪ জন রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাংসদদের রাখা হয়েছে। একইসাথে শরিকদের সাথে ছন্দ মেলাতে গিয়ে আগের দুইবারের তুলনায় মোদির মন্ত্রিসভা আয়তনে বেড়েছে।

২০১৪ সালে ৪৬ জন মন্ত্রী ছিলেন যা ২০১৯-এ গিয়ে দাঁড়ায় ৫৭ জনে। এবার তা আরো বেড়েছে। তবে আকার বৃদ্ধি পেলেও বিজেপি যে রাশ তার নিজের হাতে রাখতে চাইছে সেটি নতুন সরকারে গেরুয়া শিবিরের মন্ত্রীদের সংখ্যা দেখলেই কিছুটা স্পষ্ট হয়।

এনডিএ সরকারের মন্ত্রীরা শপথগ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে কে কোন দফতরের দায়িত্বে থাকবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডাকা বৈঠকের পর সেই ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এই বৈঠকে দফতর বণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

তৃতীয় দফার মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে ২৫ জন বিজেপির। এই তালিকায় রয়েছেন গুজরাট থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদ এস জয়শঙ্কর, তামিলনাড়ুর নির্মলা সীতারামন, হিমাচল প্রদেশের নেতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।

আছেন, উত্তরপ্রদেশের রাজনাথ সিং, গুজরাটের অমিত শাহ, মনসুখ মাণ্ডবীয়, সিআর পাটিল, মহারাষ্ট্রের নীতিন গড়কড়ি, পীযূষ গয়াল, আসামের সর্বানন্দ সোনোয়াল, কর্নাটকের প্রহ্লাদ জোশী, হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর, ওড়িশায় ধর্মেন্দ্র প্রধান, জুয়েল ওরাওঁ, মধ্যপ্রদেশের বীরেন্দ্র কুমার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাজস্থানের ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, বিহারের গিরিরাজ সিং, ঝাড়খণ্ডের অন্নপূর্ণা দেবী, তেলঙ্গানার জি কিষাণ রেড্ডি। রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণো, পাঞ্জাবের হরদীপ সিং পুরী। গেরুয়া শিবিরের রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণো, পাঞ্জাবের হরদীপ সিং পুরীও রয়েছেন এই তালিকায়।

বিজেপির যে ৩৫ জন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার।

মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের কথা মাথায় রেখে গতবারের মতো এবারেও যে শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া হবে তা আন্দাজ করেছিলেন অনেকেই। অন্যদিকে, বালুরঘাটের সংসদ সুকান্ত মজুমদার এই প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন। তিনি এতদিন বিজেপির রাজ্যসভাপতির দায়িত্ব সামলে এসেছেন। সুকান্ত মজুমদারের পর ওই পদে কে আসবেন তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে।

এই দু’জন ছাড়াও প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের জিতিন প্রসাদ, পঙ্কজ চৌধুরি, এসপি সিং বঘেল, কীর্তিবর্ধন সিং, বিএল বর্মা, কমলেশ পাসোয়ান, বিহারের নিত্যানন্দ রাই, সতীশচন্দ্র দুবে।

একইসাথে রয়েছেন, জম্মু-কাশ্মিরের জিতেন্দ্র সিং, রাজস্থানের অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ভগীরথ চৌধুরি, মহারাষ্ট্রের মুরলীধর মোহল, গোয়ার শ্রীপদ নায়েক, দিল্লির হর্ষ মলহোত্র, অন্ধ্রপ্রদেশের ভূপতিরাজু শ্রীনিবাস বর্মা, ছত্তিশগড়ের তোখন শাহু, হরিয়ানার কৃষ্ণপাল গুজ্জর, রাও ইন্দ্রজিৎ সিং এবং আসামের পবিত্র মার্গেরিটাসহ আরো অনেকে।

বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় শরিকদের ছেড়ে দিতে হয়েছে পাঁচটি কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী, দুটো স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী আর চারটি প্রতিমন্ত্রীর পদও। সেই তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন তেলুগু দেশম পার্টির কিঞ্জারাপু রামমোহন নায়ডু, জনতা দল ইউনাইটডের লাল্লন সিং, জনতা দল সেকুলারের এইচডি কুমারস্বামী, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাসের চিরাগ পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়ামী মোর্চার জিতনরাম মাঝিঁ রয়েছেন।

এনডিএ’র শরিকদল থেকে যারা প্রতিমন্ত্রীর পদে রোববার শপথ নিয়েছেন তারা হলেন- শিবসেনার প্রতাপরাও যাদব, রাষ্ট্রীয় লোকদলর জয়ন্ত চৌধুরী, রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া অঠওয়ালের রামদাস অঠওয়ালে, জেডিইউর রামনাথ ঠাকুর, আপনা দলের (সোনেলাল) অনুপ্রিয়া প্যাটেল এবং তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি।

উল্লেখ্য, ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখতে নতুন-পুরানো মিলিয়ে মুখ বেছে নেয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার জন্য। ওই তালিকায় যারা স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৩ জন মন্ত্রীর দায়িত্ব আগে পালন করেছেন, ২৩ জন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। রয়েছেন সাতজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও।

তিনজন নতুন মুখও নতুন মন্ত্রিসভায় আছে।

২৯ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, ১০ জন তফসিলি, পাঁচজন সংখ্যালঘু এবং পাঁচজন জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি আছেন এবারের মন্ত্রিসভায়। কোনো মুসলিম মন্ত্রী নেই মন্ত্রিসভায়।

নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে কটাক্ষ করলেও তার মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই পেয়েছেন দেশের ছয়টি রাজনৈতিক পরিবারও।

শরিকি হিসাব-নিকাশ
এনডিএ জোটে ‘শরিকি জটের’ আভাস মিলেছিল প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের আগেই। নতুন সরকারে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদের প্রস্তাব জানিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ারের দল এনসিপির নেতা প্রফুল প্যাটেলকে।

সেই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হননি তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, এর আগে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তিনি। নতুন মন্ত্রিসভায় তাকে যে পদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে তার ‘পদের অবনতি’ হবে।

বিজেপির প্রস্তাবে অসন্তুষ্ট হন দলের প্রধান অজিত পাওয়ারও। দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, তারা ‘অপেক্ষা’ করতে প্রস্তুত কিন্তু পূর্ণমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো পদের প্রস্তাবে রাজি হবেন না তারা।

এদিকে, বিজেপি বহুমত না পাওয়ায় কিংমেকার নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রশেখর নাইডুর দিকে তাকিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রশেখর নাইডুর অতীতের জোট পরিবর্তনের ঘটনার কথা মাথায় রেখে এই জোট সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। এখন এনসিপি’র এই দরকষাকষির পর শরিকদের মধ্যে ‘মতভেদের’ গুঞ্জন আরো জোরদার হচ্ছে।

ইন্ডিয়া জোটের সিদ্ধান্ত ও মমতা ব্যানার্জীর প্রতীকী প্রতিবাদ
নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। শনিবার আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রসঙ্গের উত্তরে মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আমি (আমার) সাংবিধানিক দায়িত্বের কারণে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছি… রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হওয়ার কারণে, এটা আমার দায়িত্ব।’

অন্যদিকে, বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিকদলের অন্য কোনো নেতা এই অনুষ্ঠানে যাননি। তারা যে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন না, সেই সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিলেন। রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের সময় ঘর অন্ধকার করে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

তিনি বলেন, ‘চিটিংবাজি করে কেন্দ্রে সরকার গড়েছে। তার বিরুদ্ধে এটা আমার প্রতীকী প্রতিবাদ।’

ভোটের ফল প্রকাশের পরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সরব হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জী। তিনি বলেছিলেন, ‘এত বড় হারের পর মোদি বাবুর উচিৎ ছিল এটা (প্রধানমন্ত্রীর পদ) কাউকে ছেড়ে দেয়া।’

এরপর শনিবার নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকছেন কি না বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দাবি করেন বিজেপির পক্ষ থেকে তার কাছে কোনো আমন্ত্রণ আসেনি। একইসাথে স্পষ্ট করে দেন, আমন্ত্রণ এলেও তিনি যেতেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘(আমন্ত্রণ) আসেওনি। যাবও না।’

‘অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে যে সরকার তৈরি করছে, তাকে আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারছি না।’

মোদির তৃতীয় ইনিংস
প্রধানমন্ত্রী মোদী তার তৃতীয় মেয়াদে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চান, তার মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্কের ওপর জোর দেয়া এবং চীনের বাড়তে থাকা ক্ষমতার আস্ফালনের মতো বিষয়গুলো। বিশেষত উত্তরের সীমান্তে এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্ষমতাস্ফালন ক্রমাগত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই সমস্ত দিক থেকে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানদের সাথে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার মন্ত্রীদের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, শপথ গ্রহণের পর সময় অতিবাহিত করতে চাননি নরেন্দ্র মোদি। রোববার নৈশভোজের সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে দেখা যায় তাকে। সে সময় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর সাথে পাশাপাশি বসে আলোচনা করেন তিনি।

সূত্রের খবর, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে দুজনের, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কথোপকথনের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি দুই দেশের পক্ষ থেকে।

উল্লেখ্য, গত বছর নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পর এই প্রথম ভারতে এলেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত মুইজ্জুর নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম ছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান।

মালদ্বীপের কিছু মন্ত্রীর ভারত সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।

মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলতেই থাকে। জানিয়ে দেয়া হয় মালদ্বীপের ১০ মে’র পর কোনো ভারতীয় সৈন্য থাকবে না, তা সে উর্দি পরেই হোক বা সাদা পোশাকে।

এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই দেশের টানাপোড়েন যখন অব্যাহত, তখন রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর ভারত সফর এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আলোচনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

সোমবার রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা। সাক্ষাৎ করার কথা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথেও। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জগন্নাথ এবং সিশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ শেখ হাসিনার
দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নতুন সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করা এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো মজবুত করার বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে (প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের) অংশ নিয়েছিলেন এবং তারপর তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একান্তে বৈঠক করেছিলেন।’

‘বৈঠকে তিনি আবারো তাকে এবং এনডিএকে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। নতুন সরকারের সাথে কাজ করার এবং সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এই প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের যোগাযোগ আরো মজবুত করতে হবে- এতে দুই দেশেরই সুবিধা হবে।’

সূত্র : বিবিসি

Related Articles