কোরবানি : গত বছরের তুলনায় কমেছে গরু ও মহিষ

কোরবানি : গত বছরের তুলনায় কমেছে গরু ও মহিষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোরবানির জন্য গরু ও মহিষের সংখ্যা গতবছরের তুলনায় কমেছে। ২০১৮ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য মোট গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার। আর ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ ২৯ হাজার। সেই হিসেবে চলতি বছর কোরবানির জন্য গরু ও মহিষের পরিমাণ কমেছে ৭২ হাজার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানির জন্য মোট প্রস্তুত করা পশুর পরিমাণ এক কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে কোরবানিযোগ্য গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার। ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ।

এছাড়া কোরবানিযোগ্য উট ও দুম্বার সংখ্যা ৩১ হাজার। ২০১৭ সালের কোরবানিযোগ্য পশুর মোট পরিমাণ ছিল এক কোটি চার লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ ২৯ হাজার। আর ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ছিল ৫৮ লাখ ৯১ হাজার। এই হিসাবে দেখা যায়, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে কোরবানিযোগ্য গরু ও মহিষের সংখ্যা কমলেও মোট পশুর সংখ্যা বেড়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৭২ হাজার গরু ও মহিষের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা। এর পরিমাণ ১২ লাখ ৯ হাজার। আর মাত্র কয়েক দিন পর ২২ আগস্ট কোরবানির ঈদ।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে গবাদি পশুর হাট। নানা রকম পশু কিনতে ভিড় করবেন ক্রেতারা। তবে ঈদের বাজারে কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা খামারিরা কোরাবানির ঈদকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন। সেভাবেই প্রস্তুত করেছেন কোরবানির পশুকে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে দেখা গেছে, সারা দেশের পাঁচ লাখের বেশি খামারি এবার কোরবানির পশুর জোগান দেবেন। কোরবানির জন্য এক কোটি ১৫ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত আছে। তাই ভারত বা মিয়ানমারের গরুর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। পশুর যোগানে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর মনে করে, দেশের কোরবানির চাহিদা পূরণে পশুর জোগান দিতে বাইরের কোনও দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটের ব্যবসায়ী কোরবান আলী জানান, গতবছরের তুলনায় গরু ও মহিষের সংখ্যা কমলে দেশে কোরবানির পশুর সংকট হতে পারে। বিশেষ করে গরু ও মহিষের। কারণ এখন দেশে বেশিরভাগ মানুষ গরু ও মহিষ কোরবানি দেয়। ছাগল ও ভেড়া কোরবানি দেওয়ার মানুষ প্রতি বছরই কম থাকে। এর ওপর ২০১৮ সাল হচ্ছে নির্বাচনি বছর। তাই রাজনীতিবিদরা এবার বেশি করে কোরবানি দেবেন, যা সব সময়ই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই গতবছরের তুলনায় এ বছর গরু ও মহিষের সংখ্যা কমলে আমাদের ভারত বা মিয়ানমারের গরুর ওপর নির্ভর করতে হতে পারে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানির জন্য আমদানি করা পশুর ওপর নির্ভর করতে হয়নি। দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানি হয়েছে। এবারও হবে। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে হাটের প্রস্তুতি ও প্রচারণা। জমজমাট বিশাল পশুর হাটের আয়োজন করতে এখন ইজারাদাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বাজার জমবে কোরবানির আগে তিন থেকে চারদিন। গত বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল এক কোটি চার লাখ ৫৪ হাজার পশু (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ)। গত এক বছরে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি।

ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর কোরবানি হতে পারে এক কোটির বেশি পশু। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দেশে পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য খামারিরা গবাদি পশু পালনে উৎসাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই। যদি গরু আমদানি করা হয় তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা পশু পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এতে দেশের কৃষি অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন হবে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০ লাখ পশু বেশি আছে। কোনও সংকট হবে না। তবে গরু-মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *