ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

দেশ ভাবনা । গাজী শরীফা ইয়াছমিন

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

ঐতিহাসিক কাল থেকেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো তাদেরও এ দেশের জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা কয়েকশ’ বছর আগে এই অঞ্চলে আসে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এই তিন প্রধান সম্প্রদায়ের এই অঞ্চলে আগমনের নানা বিবরণ সুনির্দিষ্টভাব লিপিবদ্ধ আছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের রাংগামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিনটি জেলা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। ১৩,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ অঞ্চলটি ১৮৬০ সালে স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা লাভ করে। পরে এ অঞ্চলকে তিনটি জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলায় মোট ৭টি পৌরসভা এবং ২৬ টি উপজেলাগুলির সবগুলিতেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষদের বেশির ভাগের বাস।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও জাতিসত্ত্বা সমূহের অধিবাসীদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চংগ্যা, ম্রো, লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, চাক, খেয়াং প্রভৃতি উপজাতি রয়েছে। অ-উপজাতীয়দের মধ্যে ৪৮ ভাগ মুসলমান এবং বাকীরা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা ও অ-উপজাতীয় জনগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ ভাষা, সাংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির স্বকীয়তা বজায় রেখে যুগ যুগ ধরে একে অপরের পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রকাশিত গেজেটে ২৭টি সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে।

১৯৮৪ সালের বিবিএস রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৪টি নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮২৮ জন। ১৯৯১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৯টি নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের সংখ্যা ১২ লাখ ৫ হাজার ৯৭৮ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে, যাদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৭ হাজার জন। বেসরকারিভাবে দেশে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অন্তত ৪৫ এবং তাদের সংখ্যাও সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি। তবে প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আপেক্ষিক অর্থে তা ক্ষুদ্র হিসাবেই বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসলেও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানে আদিবাসীদের সম্পর্কে সরাসরি কোনো কিছু উল্লেখ নেই। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩(ক) অনুযায়ী, রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ একইভাবে ২৮(১) অনুচ্ছেদে আছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’ সংবিধানের ২৯(২) অনুচ্ছেদের (ক) উপদফায় আরও বলা হয়েছে, নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে তাঁদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা থেকে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না। নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী বা সরকারি ভাষায় উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকেও সরকারিভাবে নির্দেশ করা হয়। যেমন শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, বিসিএস নিয়োগে কোটা ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিক্ষেত্রে উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারিতে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, (ক) বাংলাদেশ সরকারের চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীদের ন্যায্য হিস্যা প্রদান করা হবে (খ) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি পুরোপুরিভাবে সংরক্ষণ করা হবে (গ) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা তাদের ভূমির অধিকার আগের মতোই ভোগ করতে থাকবেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা ও উদারতার ধারা অব্যাহত ছিল। পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে শ্রীমতি সুদীপ্তা দেওয়ানকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তিনি পাহাড়ের অধিবাসীদের দুর্দশায় সদা ব্যথিত ছিলেন। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন, অতীতের ঔপনিবেশিক সরকারের শোষণ ও অবহেলার ফলেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয় এলাকায় কোনোরূপ উন্নয়ন হয়নি। বঙ্গবন্ধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, উপজাতীয় এলাকার জনগণের দুঃখের দিনের অবসান হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয় জনগণও স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক এবং অন্যান্য নাগরিকদের মতোই সমান সুযোগ ও সুবিধা ভোগ করবে।”

এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বৈদেশিক বৃত্তি মঞ্জুর করা হয়। ফলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয় ছাত্র-ছাত্রীরা সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, পূর্ব জার্মানি, কিউবা এবং ভারতে পাঠানো হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয় ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহারের জন্যে পাকাদালান বরাদ্দ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৬১ সালে শিক্ষার হার ১২.৭৯%, থেকে বেড়ে ১৯৭৪ সালে ১৯.৪৮% এ উন্নীত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতির স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার আদায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সৃষ্ট হয় রাজনৈতিক সংঘাত যা পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত নামে পরিচিত। বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও তার সশস্ত্র উগ্র অঙ্গ-সংগঠন শান্তি বাহিনীর মধ্যে এ সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যকার ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ সম্পাদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তির অন্বেষায়’ প্রবন্ধে ১৯৯৮ সালে লিখেছেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারী কি পাহাড়ি কি বাঙালি সবাই দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। শান্তি স্থায়ী করতে হলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষায় স্বাস্থ্যকর্মে উন্নত সমাজ গড়তে পারলেই স্থায়ী শান্তি স্থাপন হবে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই হচ্ছে শান্তির পক্ষে। সবাই শান্তি চায়।’

স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তির শর্তানুযায়ী ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/প্রতিষ্ঠান সমূহঃ (১) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, (২) পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, (৩) ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুর্নবাসন এবং অভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুর্নবাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স, (৪) রাংগামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, (৫) খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, (৬) বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, বিরিশিরি, নেত্রকোণা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, বান্দরবান, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কক্সবাজার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি, রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, রাজশাহী, মনিপুরী ললিতকলা একাডেমি, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আওতাধীন দপ্তর/প্রতিষ্ঠানসমূহ।

পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে কিন্তু সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের উন্নয়নের জন্য সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা না থাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সাল থেকে একটি নীতিমালার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে “বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)” শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা শুরু করা হয় এবং কর্মসূচিটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সর্বদা সচেষ্ট। এ লক্ষ্য ভূমি কমিশন গঠন ও ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল ২০১০’ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে।

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও ওরাও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা নিজেদের ভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে সারাদেশে ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুর মাঝে ৮ ধরনের পঠন-পাঠন সামগ্রী বিতরণ করেছে। এই শিক্ষাবর্ষে শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়নে দিনাজপুরের খানসামায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০টি পরিবারকে ‘আধা পাকা ইটের বাড়ি’ উপহার হিসেবে দিয়েছেন । এই প্রকল্পে ১০টি বাড়ি নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ২২ লক্ষ টাকা।

বাংলাদেশ সরকার আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে ২০১০ সালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনে সেই উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষণা প্রতিবেদন ২০১৩-এর তথ্যমতে, সমতলের আদিবাসীদের মধ্যে স্যানিটেশন কভারেজ ২৪.২ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশের স্যানিটেশন কভারেজ বিবিএস ২০১১-এর তথ্যমতে ৬২.৩ শতাংশ। এছাড়াও আদিবাসীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তাঁর ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অউ আনপিপলিং অউ ইন্ডিজিনাস পিপলস: দ্য কেইস অউ বাংলাদেশ’ শিরোমের গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন, ‘২৭ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী মানুষের অনুপাত ছিল ৭৫ শতাংশ, এখন তা ৪৭ শতাংশ। গত তিন দশক ধরে ওই অঞ্চলে আদিবাসী কমছে আর বাঙালিদের সংখ্যা বাড়ছে পাহাড়িরা হারিয়েছে ভূমি-বনাঞ্চল আর আমদানী করা সেটেলার বাঙালিরা দুর্বৃত্ত আমলা প্রশাসনের যোগসাজশে তা দখল করেছে। তিনি তাঁর গবেষণায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে জমিজমা এবং বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ১৬টি কৌশলের কথা বলেছেন। এইসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে-সরকারি বনায়ন, খাস সম্পত্তি রক্ষা, ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান, টুরিস্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা, ইকো পার্ক স্থাপন, ভূমি জরিপ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শত্রু সম্পত্তি আইন, ভুয়া দলিল, গুজব ছড়িয়ে সংঘাত, দাঙ্গা, জোর জবরদস্তি, ভীতি সৃষ্টি প্রভৃতি।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম অঙ্গীকার হচ্ছে, Leaving no one behind. অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্য থেকে কোনো জাতিগোষ্ঠীই বাদ পড়বে না। সেজন্য সব সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং তা দেশের সকলের জন্য তো বটেই, বিশেষ করে দেশের পিছিয়েপড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের। পিআইডি নিবন্ধ

লেখক : কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *