ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্তির বার্তা দিলেন ইমাম

ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্তির বার্তা দিলেন ইমাম

পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে রাম নবমী শোভাযাত্রা ঘিরে ব্যাপক সহিংসতায় গত ছয়দিনে চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। আসানসোলের একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল রশিদি। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের। ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই প্রতিশোধ নেয়ার নেশায় ছিলেন উত্তেজিত। কিন্তু ছেলের জানাজা নামাজের সময় আসানসোলের এই ইমাম যে মহানুভবতা দেখালেন তা অনন্য নজির স্থাপন করেছে দেশটিতে।

জানাজায় অংশ নেয়া হাজার হাজার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান ইমাম ইমদাদুল রশিদি। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তার ছেলের খুনের প্রতিশোধ যদি কেউ নিতে চান; তাহলে তিনি এই মসজিদ এমনকি এই শহর ছেড়ে চলে যাবেন।

চলতি বছরে মাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল ইমাম ইমদাদুলের ছেলে সিবতুল্লা রশিদির। মঙ্গলবার বিকেলে আসানসোলের রেইল পার এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার নিখোঁজ হয় সিবতুল্লা।

তাকে একদল উত্তেজিত জনতা তুলে নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। বুধবার রাতে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ সনাক্ত করেন। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চেতলাডাঙ্গা নদী পারের নুরানি মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল রশিদি (৪৮) বলেন, সে যখন বাইরে যায় তখন বিশৃঙ্খলা চলছিল। একদল দুর্বৃত্ত তাকে তুলে নিয়ে যায়। আমার বড় ছেলে পুলিশকে সতর্ক করে দেয়, কিন্তু তাকে পুলিশ স্টেশনে দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। পরে আমরা জানতে পারি যে, পুলিশ একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। সকালে তার মরদেহ সনাক্ত করা হয়।

সিবতুল্লাকে দাফনের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজার হাজার মানুষ আসানসোলের ইদগাহ ময়দানে উপস্থিত হন। এসময় রশিদি সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমি শান্তি চাই। আমার ছেলে চলে গেছে। আমি চাই না আর কোনো পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারাক। আমি চাই না আর কোনো বাড়ি-ঘর পোড়ানো হোক। আমি ইতোমধ্যে আগত সবাইকে বলেছি যে, যদি আমার ছেলে হত্যার কোনো প্রতিশোধ নেয়া হয়, তাহলে আমি আসানসোল ছেড়ে চলে যাবো। আমি তাদেরকে বলেছি, যদি তোমরা আমাকে ভালোবাসো, তাহলে তোমরা একটি আঙ্গুলও তুলবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি গত ৩০ বছর ধরে ইমামতি করছি। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমি মানুষকে সঠিক বার্তা দিয়েছি, শান্তির বার্তা দিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি কাটিয়ে উঠা প্রয়োজন। আসামের লোকজন এরকম নয়। এটা ষড়যন্ত্র।

আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ক্ষুব্ধ যুবকদের শান্ত করতে সহায়তা করেছেন ইমাম রশিদি। প্রশাসনকে সহায়তা করেছেন তিনি। আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। ছেলে হারানোর যন্ত্রণা সত্ত্বেও তিনি শান্তির জন্য সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

আসানসোল পৌরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেন ইমাম রশিদি। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাসিম আনসারি বলেন, মাত্রই ছেলে হারানো এক বাবার কাছে থেকে আমরা এ ধরনের বার্তা প্রত্যাশা করিনি। এটা এক ধরনের দৃষ্টান্ত, শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয় বরং পুরো দেশের জন্য। তার বক্তৃতার পর উপস্থিত লোকজন কান্না শুরু করে দেয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম…আমি বিস্মিত হয়ে পড়েছিলাম। তিনি বলেন, মরদেহ পাওয়ার সেখানকার তরুণরা উত্তেজিত ছিলেন। কিন্তু ইমামের দেয়া শান্তির বার্তা তাদের শান্ত করে। এ এলাকায় তিনি জনপ্রিয়। তিনি যদি শান্ত থাকার অনুরোধ না জানাতেন তাহলে আসানসোল জ্বলত। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *