‘আলেমতরুণদের আছে সততা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম’

‘আলেমতরুণদের আছে সততা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম’

কওমী মাদরাসার জঙ্গিতথ্য বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসই দিতে পারবেন

আলেমতরুণদের আছে সততা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম

আলেমগণ কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশেবিদেশে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন

উত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ “আল জামিয়া ইসলামিয়া আজীজিয়া আনওয়ারুল উলূম-এর প্রিন্সপাল মাওলানা শামসুল হুদা খান। তিনি একসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরস-এর সম্মানিত গভর্নরও ছিলেন। দেশের প্রবীণ এই আলেমদ্বীন স্বাধীনতার পর থেকেই যা কিছু ঘটেছে তা দেখেছেন একেবারে কাছে থেকে।

আমরা জানি, ঘোষিত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল। আগামী ২৩ ডিসম্বরকে জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কী ভাবছে দেশের আলেম সমাজ। শোকরিয়া মাহফিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বস্তবেই আলেমদের মনজয় করতে পেরেছেন? ভোটে কি আদতেই কোনো প্রভাব পড়বে? এসব বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোগী সম্পাদক মাসউদুল কাদির। নিচে আলোচনার পুরোটুকুই উপস্থাপিত হলো—

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বহুধাবিভক্ত ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার কী ভাবনা?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : ইসলামী দল বলতে ধর্মভিত্তিক যে দলগুলো আমি দেখি সঠিক অর্থে ধর্মের উপর এভাবে চললে লাভ কিনা আমার জানা নাই৷ তবে আমার মনে হয় ইসলামী রাজনীতি যেটা খেলাফতের রাজনীতি ছিলো খলীফাদের সময় সেই রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। খেলাফতের উপর আসুক সবাই- আম সেই আহ্বান জানাই।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করা হয়েছে। তখন ইসলামী দলগুলো একই পোশাকে আপনাকে ডাকছে এ অবস্থায় আপনি কোনদিকে কার পক্ষে যাবেন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আমি এদেশের একজন নাগরিক। আমার ভোট প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তাই আমি যাকে উপযুক্ত মনে করব যার দ্বারা দ্বীনের উপকার হবে, দেশের উপকার হবে, দেশপ্রেম রক্ষা হবে আমি তাকে সাপোর্ট করবো।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : এ ব্যাপারে ইসলামী দলগুলোর যে বিভিন্নমুখী অবস্থান, তা নিয়ে আপনার কোন মন্তব্য নেই!

মাওলানা শামসুল হুদা খান : এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য না দেয়াই শ্রেয় মনে করি।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাজনীতি কি শুধু ধর্মের জন্য করা উচিত না কি দেশ, জাতি ও গণমানুষের জন্য করা উচিৎ?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আমি মনে করি একটি দেশে সকল ধর্মের মানুষ বসবাস করে। এখানে ইসলামী দল থাকবে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য নাই৷ তবে আমি মনে করি দেশ, দ্বীন, মুসলমান এবং জনগণের স্বার্থে যেন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাজনীতি হয় এটা আমি কামনা করবো।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আওয়ামীলীগ শুকরানা মাহফিলের মাধ্যমে আলেমদের যে আস্থা কুড়িয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি কি আলেমদের ভোট ব্যাংকে হানা দিতে পারবে?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আমি এ বিষয়ে কথা না বলে সংবর্ধনার বিষয়টি টেনে এনে বলবো উলামায়ে কেরাম যেভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ সংবর্ধনাটা দিলেন এ নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। শোকরানা মাহফিলে আমার ছাত্র শিক্ষকগণ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আগে তো বিএনপি বা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলেমদের ভাববিনিময় বেশি ছিল, তো এই শোকরানা মাহফিলসহ আরও বিভিন্ন অবদানের কারণে আলেমদের দেখা যাচ্ছে আওয়ামীলীগ বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটু দুর্বলতা। এই জায়গায় খালেদা জিয়ার বিএনপি কি তাদের ভোট ব্যাংক রক্ষা করতে পারবে?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আমি যে কথাটি বলছিলাম, যে কিছু দেয় তার প্রতি মানুষের আবেগ অনুভূতি কাজ করে এটা স্বাভাবিক।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের আলেমরা কি ভাবছেন এখন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আসলে রাজনৈতিকভাবে আমার তেমন সম্পৃক্ততা নেই তাছাড়া ওভাবে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগও আমার কম হয়েছে। আমি আমার প্রতিষ্ঠান নিয়েই বেশী ব্যস্ত থাকি। আর কেবলই তফসিল ঘোষণা হয়ে গেল তো তেমনকিছু আমি এখনো অনুভব করতে পারছি না। আরও সময় দরকার।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আপনি শুকরানা মাহফিলের কথা নিশ্চয় জানেন, সেখানে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস কওমী মাদরাসায় কিছু কিছু জঙ্গি আছে বলে মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : এ কথাটা আমার কাছে খুব গুরুত্ববহ নয়, কারণ উলামায়ে কেরামের ভেতর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নেই। এগুলো উলামায়ে কেরাম সমর্থন করতে পারে না। এদের সংঘবদ্ধ একটি দল আছে এ দেশে। কিন্তু কওমি মাদরাসায় নেই এটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সাহেব তাহলে কীসের ভিত্তিতে এ কথাটা বলতে পারেন বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : উনার কাছে হয়তো কোন তথ্য থাকতে পারে। সেটা উনি বলতে পারবেন।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আমাদের কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের বিলটি পাশ হওয়ার পর আমরা যে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিলাম। এর মাধ্যমে কি এদেশের আলেমগণের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি, দেশের প্রতি, পতাকার প্রতি তাদের দরদ, ভালোবাসা, আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : হ্যাঁ! তা তো নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশকে নিয়ে কি এখনকার তরুণরা আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করবে?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আগে থেকেই তো উলামায়ে কেরাম দেশকে নিয়ে ভাবেন। তরুণ আলেমগণ ভাবেন। এখন আরো গভীর হলো যে এ স্বীকৃতির পেছনে প্রধানমন্ত্রীর অবদান থাকায়।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আপনি যেহেতু মাদরাসা পরিচালনা করেন, আপনি জানেন যে মাদরাসা থেকে যারা পড়াশুনা শেষ করে আলেম হয়। তারা সবাই আবার মাদরাসাতে পড়ায় এমন না। যদি কারিগরি কোন শিক্ষায় আপনার ছেলেরা পারঙ্গম হয়ে মাদরাসা থেকে বের হয়, তাহলে এ বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখবেন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আমি আমার মাদরাসায় গত বছর কম্পিউটার বিভাগ খুলেছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন এ বিভাগে ৪০ জন ছাত্র ট্রেনিং নিচ্ছে। আগামীকাল থেকে নতুন ব্যাচ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। তো আমি আজকেই কম্পিউটার বিভাগে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে কথা বললাম যে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আমরা যখন গিয়েছিলাম ”এ টু আই ” প্রোগ্রামে সেখানে কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের যে বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সেদিনই আমরা বিশ্বাস করেছি যে প্রধানমন্ত্রী উলামাদের মূল্যায়ন করতে চাচ্ছেন এবং করেন। তো সেই কথাটা আমি আমার ছাত্রদের উদ্দেশ্যেও বললাম যে তোমরা যদি কম্পিউটার শিক্ষাগ্রহণ করো তাহলে পরে সরকার কর্তৃক আমাদের ছেলেদের বিদেশে পাঠানোরও একটা পরিকল্পনা আছে। তো আমি এটাই চাই যে, যদি আমাদের ছেলেরা বিশেষ করে কওমি ছেলেরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তাদের যদি মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো যায় তাহলে দেশের রেমিট্যান্স অর্জনের সাথে এই দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে বহুগুণ।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : এই যে আমাদের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা তারা মাদরাসা সিলেবাসে যে পড়াশুনা করছেন এর বাইরে গিয়েও পড়াশুনার সুযোগ আছে। আপনি একটা কম্পিউটার বিভাগ পরিচালনার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন।

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের এ শিক্ষাটাকে আপনারা এভাবে যে এপ্রিশিয়েট করছেন, এজন্য আপনাদের অনেক অনেক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ধন্যবাদ! আরেকটা বিষয় জানতে চাইবো যে শিক্ষা সনদ যেটা দুবছর যাবত হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া পরিচালনা করছে এবং পরীক্ষা পদ্ধতি। তো এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা উঠছে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই সনদ দিয়েই ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমাদের দু’হাজার আলেমদের তারা চাকরি দিয়েছেন। তো এই সনদের মাধ্যমেই যদি রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে আমাদের তরুণরা যুক্ত হয় তাহলে সেখানে সত্যবাদিতার একটা জয় হবে বলেই বলছেন অনেক শিক্ষাবিদরা। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আমিও তাই মনে করি। আজকেও আমি আমার ছাত্রদের বলেছি, যে আমাদের ছাত্রদের সততা রয়েছে। একাগ্রতা ও দেশপ্রেম রয়েছে। অতএব আমাদের ছেলেরা যদি এই কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাহলে আমার মনে হয় তারা তাদের এ সততার জন্য একাগ্রতার জন্য প্রতিটি জায়গাতেই একটা স্থান করে নিতে পারবে বলে আমি মনে করি।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। অসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ 

মাওলানা শামসুল হুদা খান : আপনাকে এবং আপনাদেরও অসংখ্য শুকরিয়া। আপনারাও ভালো থাকবেন। হিলিতে দাওয়াত রইলো। ওয়ালাইকুমুস সালাম।

গ্রন্থনা : কাউসার মাহমুদ

রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন মাওলানা শামসুল হুদা খান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *