খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সদিচ্ছা বলতে একটা কথা আছে। যার যত অর্থ সে তত বড় ঋণ খেলাপি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ব্যাংকের আমানত নষ্ট করে এভাবে ঋণ দেয়ারও কোনো মানে হয় না। খেলাপি ঋণ যত বাড়বে তত বেশি দেশ নিচের দিকে যাবে। অর্থনৈতিক ফতুর হবে দেশ। থলের বিড়াল খুঁজে পাওয়ার আগেই পাচার হবে মুদ্রা। পাচারও ঠেকানো যাচ্ছে না। তা আমার বার্তায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে।

আমরা দেখেছি, শতকোটি টাকার বাড়ি, কয়েক কোটি টাকার গাড়ি, একাধিক দেশে সেকেন্ড হোম, মুদ্রাপাচার করে বিদেশে টাকা জমানো, নিজের বা পরিবার-পরিজনের কথায় কথায় বিদেশ ভ্রমণ-এমনি আয়েশি জীবনযাপন করেন অনেক ব্যবসায়ী। অথচ তারা ঋণ খেলাপি। কিন্তু তাঁরাই ব্যাংক থেকে নেওয়া শত শত বা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করেন না।

সম্প্রতি রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিক্যের কারণে তাঁদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবেও ক্ষমতাশালী। ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। আবার ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনৈতিক যোগসাজশও এর সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এসব অনিয়মের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাত চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। তারপরও অনিয়ম দূর করার ক্ষেত্রে জোরদার কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

শনিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট পাওনা প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। সংসদে উপস্থাপিত তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯০টি এবং তাদের কাছে মোট পাওনা রয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এই তালিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

অর্থনীতিসংশ্লিষ্টরা ঋণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠন ও অবলোপনসহ প্রতিটি পর্যায়ের পূর্ণ তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, শুধু তাতেই সরকারের স্বচ্ছতা এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কুপ্রথা বন্ধে সরকারের আন্তরিকতা প্রকাশ পাবে।

এ পর্যন্ত কোনো সরকারই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। জানা যায়, গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় চার গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে তা হয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সাত মাসে বেড়েছে ১৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। আর কী পরিমাণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠন ও অবলোপন হয়েছে জানা গেলে আসল পরিমাণটা জানা যেত। মোট কথা, খেলাপি ঋণ বাড়ছেই। এভাবে কি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে? আমরা আশা করি, এই কু-প্রবণতা রোধে সরকার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় দেবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *