গণহত্যা থেকে বাঁচার পর আসামের মুসলমানরা নাগরিকত্ব নিয়ে শঙ্কায়

গণহত্যা থেকে বাঁচার পর আসামের মুসলমানরা নাগরিকত্ব নিয়ে শঙ্কায়

ওয়ার্ল্ড ডেস্ক : ভারতে ৩৬ বছর আগের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বাবা-মা, বোন ও একটি মেয়েকে হারিয়েছেন আবদুল সুবান। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে এবার তাকে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হচ্ছে। তার মতো কয়েক হাজার বাংলাভাষী মুসলমানের নাম সন্দেহভাজন ভোটারের তালিকায় রাখা হয়েছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত আসামের জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধনে(এনআরসি) তার নাম নেই।

যদিও তিনি ও তার বাবা আসামেই জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায়ও তার বাবা নাম ছিল।

সোমবার এনআরসির এ তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৬০ বছর বসয়ী এ বৃদ্ধ বলেন, যদি সরকার আমাদের বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করতে চায়, সেখানে আমাদের কী করার আছে? এনআরসি আমাদের শেষ করে দিতে চাচ্ছে।

আমাদের লোকজন এখানেই মারা যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা এ জায়গাটা ছাড়তে পারছি না বলে জানান আবদুল সুবান।-খবর রয়টার্সের।

নিজের ঘরের ভেতর বসেই তিনি এ কথাগুলো বলেন। পাশেই তার স্ত্রী বসা ছিল। তার বাড়ি থেকে কয়েকশ মিটার দূরে একটি ধানক্ষেত। ১৯৮৩ সালে শত শত লোককে সেখানে তাড়িয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

আসাম থেকে মুসলিম অভিবাসীদের বের করে দিতে সশস্ত্র লোকজন ওই হামলা চালায়। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে গায়ের সব শক্তি দিয়ে দৌড়ে একটি জঙ্গলের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘনজঙ্গলের মধ্যে বেশ কয়েক দিন অবস্থান করতে হয়েছিল তাকে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার দেশটির নাগরিকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার গতি বাড়িয়েছে। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিজেপির ‘হিন্দু-ফার্স্ট’ বা হিন্দুই প্রথমে স্লোগানের প্রচার অভিযানও চরম রূপ নিয়েছে।

সমালোচকরা বলেন, বিভাজন নীতির ওপর ভিত্তি করে এমন কার্যক্রম চলছে। এতে আসামের নাগরিকত্বের পরীক্ষা নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

তারা বলেন, মোদি সরকারের অধীনে ভারতের উত্তরাঞ্চলে মুসলমান গবাদিপশু বিক্রেতাদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এতে ভারতের সামাজিক বিভাজন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

ক্ষমতায় থেকেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সব ধরনের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছে বিজেপি।

বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপর চালানো নেলি হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন গণকবরে শায়িত স্বজনদের বিবরণ দেন। যদিও এ কবরের আংশিক এখন পানির নিচে।
আসামের বেশ কয়েকটি গ্রামে চালানো ওই গণহত্যায় দুই হাজারের মতো লোক নিহত হন।

তারা বলেন, সোমবারে এনসিআরের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এতে নতুন সহিংসতার জন্ম দেবে না বলেই তারা বিশ্বাস করেন।
চা বাগান ও তেল ক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত আসামে তিন কোটি ৩০ লাখ লোকের বসবাস।

বহিরাগতদের তাড়িয়ে দিতে অসমীয়দের হিংস্র বিক্ষোভের পর এই নাগরিকত্বের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিদেশিরা তাদের চাকরি ও সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
আসামে বিজেপির মুখমন্ত্রীর আইনি উপদেষ্টা সান্তানু ভারাইলি বলেন, নিজেদের নিরাপদ রাখতে অসমীয়দের কাছে এনআরসির গুরুত্ব অনেক।
তিনি বলেন, এটি নৈতিক জয়। নৃতাত্ত্বিক অসমীয়রা সবসময় বিদেশিদের উপস্থিতি মেনে নেন, এটাই তার প্রমাণ।

কিন্তু দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সরকার এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে তারা বৈধ ভারতীয় মুসলমানদেরও টার্গেটে পরিণত করেছে।

বিজেপি ও এনআরসি কর্তৃপক্ষ সবসময়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে আসামের সব অধিবাসীকে প্রমাণ করতে হবে, তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে বসবাস করে আসছেন।
আবদুল সুবান ও তার বাবা আসামে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৬৫ সালেও তা বাবা আসামের ভোট্র ছিলেন।

মাটিমাখা একটি হলুদ ডকুমেন্টও তিনি রয়টার্সকে দেখিয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ ব্যক্তিগত ঘটনা নিয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেছে। বলেছে, অবৈধ অভিবাসীদের দেয়া সব তথ্যপ্রমাণ সত্য না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *