গর্ভপাত আইন সংস্কার করতে চলেছে জার্মানি

গর্ভপাত আইন সংস্কার করতে চলেছে জার্মানি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জার্মান সরকার শুক্রবার গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন সংস্কার করার পরিকল্পনা জানিয়েছে। এই আইনে গর্ভপাতের পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য দেয়া হলে চিকিৎসকদের ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান ছিল।

অন্তঃসত্ত্বার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলে বা ধর্ষণের ঘটনায় বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসেন না তারা। নইলে বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিংয়ের পর গর্ভধারণের প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে (শেষ ঋতুস্রাব থেকে ১৪ সপ্তাহ) গর্ভপাত করা যেতে পারে। তবে অনেক বাধা রয়েছে।

জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ আইন সংস্কারের পক্ষে ভোট দিয়েছে অর্থাৎ ডাক্তারদের এখন অতিরিক্ত তথ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো মামলার ভয় ছাড়াই গর্ভপাত সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবেন তারা।

আগের আইন অনুযায়ী, জার্মানিতে ডাক্তারদের বলার অনুমতি ছিল যে তারা গর্ভপাতের প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু আরো বিস্তারিত তথ্য জানানোর অনুমতি ছিল না।

জার্মানিতে গর্ভপাত বেআইনি। তবে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এর অনুমোদন রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করতে হবে এমনটাই বলে আইনে।

আইনমন্ত্রী মার্কো বুশমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে গর্ভপাত করাতে চান এমন নারীদের সচেতন করাটা চিকিৎসকদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করা হতো। এমনকি জরিমানাও দিতে হতো তাদের। নারীদের প্রতি অবিশ্বাস এবং ডাক্তারদের প্রতি অবিশ্বাসের সময় এবার শেষ।”

২২ বছরের ভেরেনা বলেন, ‘‘আমি সত্যিই অনলাইনে তথ্য খুঁজে হয়রান হয়ে গিয়েছি। কোন চিকিৎসক গর্ভপাত করেন, তারা কোথায় বা কীভাবে এ কাজ করেন, তা জানতে সহজ কোনো উপায় ছিল না।”

বর্তমান সরকার জোট গড়ার সময়ই আইনটি সংস্কার করার পরিকল্পনা করেছে। এই নিয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরে জোটের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। জার্মানির মধ্য-বাম সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি, সবুজ দল এবং মুক্ত গণতন্ত্রী দল এফডিপির জোট সরকার শুক্রবার সংসদে গর্ভপাত আইনে ২১৯এ ধারা খারিজ করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে।

ক্রিস্টিনা হানেল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের গিসেন শহরের একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি ৩০ বছর ধরে গর্ভপাত করেছেন। ওয়েবসাইটে গর্ভপাত পরিষেবা উল্লেখ করায় তাকে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ছয় লাখ টাকা জরিমানার শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এই মামলার ফলে জার্মানিতে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি এখন ২১৯এ খারিজ করা হয়, জার্মানি রোগীদের জন্য তথ্য সরবরাহে ঠিক পদক্ষেপ করবে।”

পাঁচ বছর আগে ভেরেনা দেখেছিলেন তথ্য সহজে না মেলার অর্থ স্থানীয় ক্লিনিকে কল করার আগে কয়েক ঘণ্টা অর্থহীনভাবে অনুসন্ধান করা। তাকে নিজের এলাকার তিনজন ডাক্তারের মধ্যে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারপরে তিনি দেখতে পেলেন যে তথ্য পাওয়ার কোন উপায় নেই যেমন: অস্ত্রোপচার করে গর্ভপাত এবং ঔষধের মাধ্যমে গর্ভপাতের পার্থক্য কী? পরবর্তী প্রক্রিয়াটি কেমন এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী কী?

ইয়ানা মায়েফের্ট নামে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘জার্মানিতে ১০ জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে একজন গর্ভপাত সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার করেন।তারা এর বিরুদ্ধে এমনটা নয়। কারণটা হল বাধা অনেক বেশি।”

মায়েফের্ট প্রজননের অধিকার সংক্রান্ত সংগঠন ‘ডক্টরস ফর চয়েস’-এর সঙ্গে যুক্ত। তার কথায়, ডাক্তার খুঁজে পেতে ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং বাভারিয়ার ক্যাথলিক অঞ্চলে। তবে, কয়েকটি বড় শহরেও পরিস্থিতি সমীচীন। স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে স্টুটগার্টে একটি হাসপাতালেও গর্ভপাতের পরিস্থিতি নেই। মুনস্টার শহরে শেষ যিনি গর্ভপাতের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি ২০১৯ সালে অবসর নিয়েছেন।

গর্ভপাতের হার কম

১৯৯৬ সালের পর থেকে জার্মানিতে গর্ভপাতের সর্বনিম্ন হার দেখা গিয়েছে ২০২১ সালে। ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিসের মতে, ২০২১ সালে প্রায় ৯৪ হাজার গর্ভপাত হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৪ শতাংশ কমেছে এবং এক দশক ধরে গর্ভপাতের হারের নিম্নমুখী প্রবণতারই অংশ।

মায়েফের্ট বলেন, অনেক সময় এইসব চিকিৎসকদের হেনস্থা করা হয়। তিনি নিজে বার্লিনে কখনো এর মুখোমুখি হননি। তার কথায়, ‘‘বাভারিয়ার কিছু অংশে প্রতিবাদকারীরা সব সময় ক্লিনিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এটা রোগী এবং ডাক্তারদের জন্য সত্যি ভয়ঙ্কর।”

পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা

মেডিকেলের পড়ুয়ারা অর্থাৎ জুনিয়র চিকিৎসকরা এ প্রসঙ্গে প্রশিক্ষণ পাওয়ার জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজে পেয়েছে। একটি পেঁপেকে মহিলা প্রজনন সিস্টেমের মডেল হিসাবে ব্যবহার করে কর্মশালার আয়োজন করেছে।

যদিও এই ধরনের কর্মশালায় উপস্থিত থেকে একজন চিকিৎসক গর্ভপাত করাতে আত্মবিশ্বাসী হবেন এমন নয়। এটি জার্মান চিকিৎসা শিক্ষার একটি খামতিও। পড়ুয়ারা বলেন, ‘‘গর্ভপাত নিয়ে আলোচনা করা হয়, তা ওই ১০ মিনিটের মতো।”

বার্লিনের পাবলিক ব্রডকাস্টার আরবিবি-এর মতে, ওয়ার্কশপগুলি সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে যায়। একজন অংশগ্রহণকারী আরবিবিকে বলেন ‘‘কর্মশালায় অংশ নিয়ে ভালো ধারণা পেয়েছি। এই প্রক্রিয়া কীভাবে হয়, কোন সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলো জানা গিয়েছে।আমি এটিকে খুব কঠিন ভাবতাম। এখন এতে এত ভয় পাই না।”

জার্মানির কয়েকজন ডাক্তার এখন টেলিমেডিসিন প্রকল্পে গর্ভপাতের জন্য ট্যাবলেট দিচ্ছেন যেখানে অন্তঃসত্ত্বা গর্ভপাত করতে চান কিন্তু অস্ত্রোপচার চান না। তবে এই ট্যাবলেটকে মর্নিং-আফটার পিলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে হবে না। এটি ২০১৫ সাল থেকে জার্মানিতে অবাধে পাওয়া যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *