গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ করছে কোন কোন দেশ

গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ করছে কোন কোন দেশ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যেভাবে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা করছে তা নিয়ে অনেক দেশই তেল আবিবের সমালোচনা করছে।

ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাগিদ দেওয়া দেশগুলো কে কী বলছে জেনে নেওয়া যাক-

আলজেরিয়া: আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আলজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

আফ্রিকান ইউনিয়ন: ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকার অস্বীকারকে বর্তমান উত্তেজনার প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপার্সন মুসা ফাকি মাহামত। এজন্য তিনি উভয় পক্ষকে সামরিক বৈরিতা বন্ধ করতে এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

বেলিজ: হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতার নিন্দা করে মধ্য আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশের দেশ বেলিজ। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসাবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে সমর্থন করার সময় অবিলম্বে ডি-এস্কেলেশনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। তাদের দাবি, পৈতৃক মাতৃভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য নিজের ভূমিতে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে।

ব্রাজিল: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় বসবাসকারী এক মিলিয়নেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে এলাকা ছাড়তে বলার নির্দেশের খবরটি হতাশার বলে উল্লেখ করেছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো লুইজ ইকার ভিয়েরা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর নিউইয়র্কে বক্তৃতায় তিনি দুই পক্ষকেই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান।

কলম্বিয়া: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের আলোচনার টেবিলে আসা ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো। তিনি গাজার পরিস্থিতি এবং অতীতের নৃশংসতার মধ্যে ঐতিহাসিক তুলনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আজ গাজা ওয়ারশ ঘেটোর চেয়েও ধ্বংস হয়ে গেছে বা তার চেয়েও বেশি দেখা যাচ্ছে।”

কিউবা: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সহিংসতার নিন্দা করে ফিলিস্তিনি অধিকারের দীর্ঘস্থায়ী লঙ্ঘনের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করেছে কিউবা।

ইন্দোনেশিয়া: আরও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি বলছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব এই সংঘাতের মূল কারণ।

ইরাক: গাজায় হামলাকে ইসরায়েলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতা বলে অভিহিত করেছে।

ইরান: ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকে ইসরায়েলের উস্কানির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি।

আয়ারল্যান্ড: ইসরায়েলের বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ এবং পানি বন্ধ করার পদক্ষেপের নিন্দা করে একে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন এবং সম্মিলিত শাস্তি বলে অভিহিত করেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার।

কুয়েত: গাজায় উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সহিংসতা বন্ধ করতে, ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা করতে এবং ইসরায়েলের উস্কানি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তারা বলছে, প্রতিরোধ ছাড়া সহিংসতা অব্যাহত থাকলে তা শান্তি প্রচেষ্টা এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

মরক্কো: আব্রাহাম চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সাথে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হওয়া মরক্কো গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং শান্তিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

এছারা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে পৌঁছানোর উপায় হিসেবে সংলাপ ও আলোচনার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে মরক্কো। আরব লিগের একটি অধিবেশনে ফিলিস্তিনের জন্য মরক্কোর পূর্ণ এবং অটুট সমর্থন রয়েছে বলে জানান মরক্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রী নাসের বোরিতা।

মালয়েশিয়া: গাজা উপত্যকায় সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘস্থায়ী দখল ও দুর্ভোগ এবং আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতাকে সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে দেশটি।

মালদ্বীপ: গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে মালদ্বীপ সরকার। দেশটি বলছে, ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্তের ভিত্তিতে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন করা যেতে পারে। যেখানে পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী হবে।

নরওয়ে: গাজার সম্পূর্ণ অবরোধকে অগ্রহণযোগ্য বলে সমালোচনা করেছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ট। একইসঙ্গে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “গাজার বেসামরিক জনসংখ্যার বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের পরিবহন করতে দিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গাজায় ধ্বংসের মাত্রা বিশাল। বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধ, সীমান্ত অতিক্রম বন্ধ ও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় আমি আশঙ্কা করি, গাজার বেসামরিক জনগণ আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি কষ্টের সম্মুখীন হবে।”

ওমান: ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা দুই পক্ষকেই সংযম অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে ও উত্তেজনা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তান: অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমা হামলার নিন্দা করে একে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি। তিনি বলেন, “এটি একটি মানবিক সংকট। আসলে, এটি ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পরিচালিত গণহত্যা।”

জিলানি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনি সংগ্রামের বিপরীতে আগ্রাসী ইসরায়েলকে সমর্থন প্রচেষ্টা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।” পাকিস্তান ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় না। ঐতিহাসিকভাবে দেশটির অবস্থান, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোকে অবশ্যই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে জাতিসংঘের প্রস্তাবের সাথে সঙ্গতি রেখে খালি করতে হবে।

কাতার: ফিলিস্তিনি অধিকার লঙ্ঘনের কারণে, বিশেষ করে আল-আকসা মসজিদে অনুপ্রবেশের কারণে ইসরায়েলকে দায়ী করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে উভয় পক্ষকে উত্তেজনা হ্রাসে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

রাশিয়া: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শক্তির মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এটি সমাধান করতে হবে বলে মত রাশিয়ার। মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, সহিংসতা পরিত্যাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় একটি আলোচনা প্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সমস্যা সমাধানের জন্য, “পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের” বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এমনকি এ সপ্তাহের শুরুতে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করতে ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাশিয়া একমত নয় বলেও জানায়।

সিরিয়া: ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও অবরোধের সমালোচনা করে সিরিয়া গত ৭ অক্টোবরের হামলার পেছনে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দলগুলোর প্রশংসা করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা: শনিবার একটি বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের ন্যায় সংগ্রামের জন্য তার দেশের ঐতিহাসিক সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা। তিনি বলেন, “আমরা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে আমাদের একাত্মতার অঙ্গীকার করছি।”

তিনি ইসরায়েলকে একটি অত্যাচারী দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

ভেনেজুয়েলা: গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভেনেজুয়েলা সরকার। সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে সহিংসতার অবসানের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২৩৩৪ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

ভেনেজুয়েলা জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে তার ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *