গাজায় প্রচণ্ড হামলা অব্যাহত: আপাতত নেই নতুন যুদ্ধবিরতি

গাজায় প্রচণ্ড হামলা অব্যাহত: আপাতত নেই নতুন যুদ্ধবিরতি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: নতুন করে যুদ্ধবিরতিতে যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবান আমলে নিল না হামাস বা ইসরায়েল কেউই। গতকাল শনিবার কাতারে যুদ্ধবিরতি আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল সরকার। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার বলেছে, গত শুক্রবার থেকে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের বাসিন্দারা বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গতকালই সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ হয়েছে।

উত্তর ও দক্ষিণের কিছু কিছু এলাকায় হামাসবিরোধী হামলার আভাস দিয়ে সেখান থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর গতকাল শনিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গাজায় তুমুল বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। কালো ধোঁয়ায় আবার ছেয়ে গেছে জনবহুল ভূখণ্ডটির আকাশ। ইসরায়েলি বাহিনী গতকাল বলেছে, তারা ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।

নিরাপদ ঘোষিত দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে শুক্রবার দিবাগত রাতে ৫০ দফা আঘাত হেনেছে তারা। গাজা সিটির আল আহলি আরব হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ফাদেল নাইম বলেন, তাঁদের হাসপাতালের মর্গে সকাল থেকে সাত শিশুর লাশসহ অন্তত ৩০টি লাশ এসেছে। গাজার এক বাসিন্দা বলেন, ইসরায়েলি বোমায় তাঁদের তিনটি বাড়ি গুঁড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো ১৩ জন ধ্বংসস্তূপের ভেতর রয়েছে।

এদিকে দুই দিন বন্ধ থাকার পর মিসর থেকে আবার গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। সাত দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ গত শুক্রবার শেষ হওয়ার পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে সংঘাত ছড়ায়। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে ব্যর্থতার জন্য দুই পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘অচলাবস্থা’ দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে কাতার থেকে মোসাদের আলোচনাকারী দলকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালাতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি দল দেশটির রাজধানীতে গিয়েছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া ও তাঁর দলকে দোহা থেকে তেল আবিবে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস চুক্তির শর্তাবলি পূরণ করেনি। এর মধ্যে হামাসের কাছে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী সব নারী ও শিশুকে মুক্তি না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল।

কাতারে গত শুক্রবার জিম্মি মুক্তি নিয়ে দর-কষাকষি ব্যর্থ হওয়ার পর এক সূত্র বলেছে, এই মুহূর্তে তারা আরো একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা দেখছে না। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, তিনি আলোচনার আশা ছাড়েননি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হওয়াই যুদ্ধবিরতি ভাঙার কারণ।

তিনি বলেন, হামাস যদি আরো জিম্মির মুক্তি দিতে রাজি হতো, তাহলে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ ছিল। হামাস বলেছে, আরো জিম্মি মুক্তিসংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে ইসরায়েল সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গাজায় একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছেন। ম্যাখোঁ বলেছেন, এই যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে তিনি খুব উদ্বিগ্ন। হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চেয়ে তিনি কাতার যাবেন বলেও জানিয়েছেন ফরাসি নেতা।

 

সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *