গাজায় সংঘাত বন্ধের চেষ্টায় কায়রোয় শান্তি সম্মেলন

গাজায় সংঘাত বন্ধের চেষ্টায় কায়রোয় শান্তি সম্মেলন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের দুই সপ্তাহ পেরিয়েছে। এই সময়ে ইসরায়েলের বিরামহীন হামলায় গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে এক ‘মুত্যুকূপে’। দিন দিন সেখানকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যু, ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এ সংকট কাটাতে শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোয় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক শান্তি সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। থাকবেন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও।

এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য, গাজায় ইসরায়েল যে সহিসংতা ও নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে তা বন্ধের চেষ্টা করা, হামাস ও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি সমাধানে পৌঁছানো। সম্মেলনের আহ্বায়ক মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ও সত্যিকার অর্থে একটি শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু করতে মিসর প্রস্তুত।

সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট চলমান সংকটে এক আন্তর্জাতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে চান বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরি। তিনি বলেছেন, সংঘাত বন্ধ, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই এবং গাজায় জরুরিভাবে ত্রাণ পাঠাতে এ ঐকমত্য হবে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে।

এমন সময়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে একটি হাসপাতালে হামলাতেই শুধু নিহত হয়েছেন ৪৭১ জন। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘসহ অনেক সংস্থা। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বলেছে, গাজা এখন এক নরকের কুণ্ডে পরিণত হয়েছে।

কায়রোয় শনিবারের সম্মেলনে বিশ্বনেতা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কারা উপস্থিত থাকছেন, তাঁদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তালিকায় রয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, কুয়েতের যুবরাজ শেখ মিশাল আল-আহমেদ আল-জাবের আল-সাবাহ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্তোদোলিদেস। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রি পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সম্মেলনে নিজের উপস্থিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেন, কায়রোয় তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, ফিলিস্তিন ও এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন। ওয়াশিংটন থেকে তিনি আরও বলেন, ‘মিসরের সহায়তা প্রয়োজন, চলুন মিসরের পাশে দাঁড়াই।’
সিরিল রামাফোসার শনিবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, গাজায় বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা হচ্ছে। এতে সেখানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। এসব নিয়ে সিরিল রামাফোসা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এদিকে গাজাবাসীর ওপর হামলা বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শুধু বিভিন্ন দেশের নেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃস্থানীয়রাই নন, সাধারণ নাগরিকেরাও। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশে দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবারও বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানিয়ে বেসামরিক লোকজনকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *