গাজায় স্বেচ্ছাসেবক হতে নাম লিখিয়েছেন ২,৮০০ পাকিস্তানি ডাক্তার

গাজায় স্বেচ্ছাসেবক হতে নাম লিখিয়েছেন ২,৮০০ পাকিস্তানি ডাক্তার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফিলিস্তিনের গাজা মানেই এখন নিহত লোকের সারি, আহত লোকের ভিড়। তাদের সাহায্য করার জন্য দরকার শত শত চিকিৎসাকর্মী। একদিকে বাইরের ডাক্তার সেখানে ঢুকতে পারছেন না, ওপরদিকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২০০ চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ অবস্থায় গাজায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে নাম লিখিয়েছেন অন্তত দুই হাজার ৮০০ পাকিস্তানি চিকিৎসক। তবে সেখানে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তারা যথেষ্ট সন্দিহান। খবর ডন।

পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি এনজিও গাজায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য আগ্রহী চিকিৎসকদের তালিকা করছে। এসব এনজিও এ মুহূর্তে ডাক্তার-নার্সদের নাম নিচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সংগ্রহ করছে। গাজায় যাওয়ার সুযোগ পাওয়া মাত্র তারা সেখানে গাজাবাসীকে সহায়তা করতে চান।

আল খিদমত ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও আহ্বানে সাড়া দেওয়া চিকিৎসকের তালিকায় রয়েছেন হাফিজুর রহমান। লাহোরের ৪২ বছর বয়সী এই অর্থোপেডিক সার্জন বলেন, যখন আমি আমার বাবাকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানাই তখন তার একমাত্র কথা ছিল ‘ফিলিস্তিনের জনগণকে আমার সালাম দিও’।

ডাক্তার হাফিজ বলেন, যখন আমি শুনি গাজার ডাক্তাররা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন এবং তাদের নিজের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে শোক করার সময়ও নেই, তখন আমার আফসোস হয়, আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।

এর আগে ডাক্তার রহমান তুরস্কের ভূমিকম্পে আহত লোকজনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাজ করা যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করার চেয়ে আলাদা। তারপরও তিনি বলেন, যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করার প্রশিক্ষণ আমার আছে। সুতরাং আমি গাজাতেও কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি জানিয়েছেন, মেডিসিন সানস ফ্রন্টিয়ার্স এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসকেও তিনি তার নাম দিয়েছেন, যাতে প্রথম সুযোগেই তিনি গাজায় যেতে পারেন।

স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকায় নাম লিখেছেন ৪৭ বছর বয়সী অ্যানেস্থেটিস্ট ডা. আনজুম নাসিম এবং তার স্ত্রী ৪১ বছর বয়সী পেডিয়াট্রিক অনকোলজিস্ট ডাঃ হুমা জাফর। আগে এমন পরিস্থিতিতে কাজ না করলেও তারা গাজায় কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানান। তারা বলেন, কোভিডের সময় আমরা অন্যরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। ফলে গাজায়ও আমরা মানিয়ে নিতে পারবো।

ডা. হুমা জাফর অবশ্য বলেন, এ উদ্যোগের উদ্যোক্তরা নারী ডাক্তারদের চেয়ে পুরুষ ডাক্তারদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কারণ তারা মনে করে আমরা হয়ত বিপদের কারণ হতে পারি। তাই আমাদের নিরাপদ এবং সুরক্ষিত অঞ্চলে থাকা উচিত। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এসব এনজিওর তালিকায় থাকা ডাক্তারদের প্রায় ৫০ শতাংশই নারী।

আল খিদমত ফাউন্ডেশনের প্রধান ডা. জাহিদ লতিফ বলেন, গাজায় শুধু মানবিক সাহায্য নয়, চিকিৎসকও দরকার। তাই আমরা আগ্রহী ডাক্তারদের তালিকাভুক্ত করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিশর এসব ডাক্তারদের ভিসা দেয়নি। ফলে তারা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।

তিনি বলেন, একান্তই যদি তাদেরকে গাজায় প্রবেশের সুযোগ না দেওয়া যায়, তাহলে রাফাহ সীমান্তে একটি হাসপাতালের স্থাপনের ব্যবস্থা করা হোক, যেখানে আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে। কারণ এখন অন্তত মানবিক ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের সহায়তা দেওয়ার সময়। এ বিষয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশে যে জড়তা দেখা যাচ্ছে, তাতে আমি খুবই হতাশ।

পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি গত শুক্রবার সিনেটে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জানান, ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য পাকিস্তান মিশরীয় ও জর্ডান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *