পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ফিলিস্তিনের গাজায় গত ৭৫ দিনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত ছাড়িয়েছে ২০ হাজার। আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। শুধু তাই নয়, বিধ্বস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে রয়েছে আরও হাজারো মানুষ। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী-শিশু। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল হামলায় এতসংখ্যক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটলো। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে আকস্মিক হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি, ওই একদিনের হামলায় ১১৪০ ইসরায়েলি নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছে। এছাড়া হামাস বিদেশিসহ ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে আসে।
হামাসের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ওইদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। দিনে-রাতে অনবরত ইসরায়েলি বিমান থেকে শত শত টার্গেটে বোমা ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে গুড়িয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ-গির্জা, আশ্রয়শিবির সবকিছু। অন্যদিকে একেকদিনে এসব বোমা হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন কয়েকশত করে ফিলিস্তিনি।
গাজায় হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, গত সাত অক্টোবর থেকে হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ হাজার শিশু এবং নারী ৬ হাজার ২০০ জনের বেশি।
শুধু বিমান হামলাই নয়, গাজাকে পুরো অবরুদ্ধ করে রাখার কারণে খাদ্য-পানি ও জ্বালানির অভাবে গাজায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। না খেয়ে কাটাচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ।
গাজায় বুধবার যুদ্ধ গড়িয়েছে ৭৫ দিনে। মাঝে ২৪ নভেম্বর থেকে এক সপ্তাহের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি ছিল। ওই যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েলের শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তবে যুদ্ধবিরতির পর ১ ডিসেম্বর থেকে হামলার তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী(আইডিএফ)।
গাজায় ইসরায়েলের এমন নৃশংস হামলায় বিশ্বজুড়ে চলছে নিন্দা ও প্রতিবাদ। সঙ্গে দাবি উঠেছে যুদ্ধ বন্ধের। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সম্প্রদায়।
তবে তাতে তোয়াক্কাই করছে না ইসরায়েল। যদিও জিম্মিদের সবাইকে ফিরিয়ে আনার জন্য নিজদেশে চাপে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকার। নেতানিয়াহু বলছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা না পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
বুধবারই এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যদি কেউ মনে করেন যে ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জনের আগে যুদ্ধ বন্ধ করবে, তবে তিনি বাস্তবতা সম্পর্কে কিছু জানেন না।
গাজায় জরুরি মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আরব আমিরাতের একটি প্রস্তাব নিয়ে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হওয়ার কথা। এর আগেও নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ কয়েকদফায় প্রস্তাব নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে।
এবার ভেটো এড়াতে বিষয়টি নিয়ে আগেই আলোচনা হচ্ছে আর তাতে ভোটাভুটি দুদিন আগে হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি।
আরব আমিরাতের খসড়া প্রস্তাবে হামাসের হাতে বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য কায়রো গিয়েছেন হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া।