গাজা যুদ্ধবিরতির বাধা নিয়ে আলোচনা চলছে : যুক্তরাষ্ট্র

গাজা যুদ্ধবিরতির বাধা নিয়ে আলোচনা চলছে : যুক্তরাষ্ট্র

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী চুক্তি অর্জনের জন্য মিসরের রাজধানী কায়রোতে আলোচনা এখনো চলেছে আর তা এগিয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কিরবি যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আলোচনা ‘গঠনমূলক’ ছিল। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ সহযোগী ব্রেট ম্যাকগার্ক এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

নির্দিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে বাকি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আগামী কয়েকদিন ওয়ার্কিং গ্রুপ স্তরে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিরবি বলেন, ওয়ার্কিং গ্রুপগুলো যেসব ইস্যু সামাল দিবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হামাসের বন্দী এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়। তিনি আরো বলেন, কতজন বন্দী বিনিময় হতে পারে, তাদের পরিচয় এবং মুক্তির সম্ভাব্য সময়, এসবের বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলা আলোচনা কখনো বন্ধ আবার কখনো ফের শুরুর মাধ্যমে কয়েক মাস পার হয়ে গেছে, কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো চুক্তি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

আঞ্চলিক যুদ্ধ বৃদ্ধির কারণে কায়রোতে চলা সাম্প্রতিক আলোচনাও হুমকির মুখে পড়েছে। রোববার ভোরে লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরাইলে শত শত রকেট এবং ড্রোন নিক্ষেপ করে। হিজবুল্লাহ কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলা চালাতে যাচ্ছে, এমনটি টের পেয়ে সেটি প্রতিরোধ করতে প্রায় ১০০ জঙ্গি বিমান নিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরাইল কিন্তু তারপরও হামলা এড়াতে পারেনি তারা। তবে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এই আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধ কায়রো আলোচনায় কোনো প্রভাব ফেলেনি বলে দাবি করেছেন কিরবি।

পশ্চিম তীরে নিহত ৬ : ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথেলহেমে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা গুলি করে এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও আরো তিনজনকে আহত করেছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একই দিন তুলকার্ম শহরের নিকটবর্তী নূর শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় আরো পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, নূর শামস শরণার্থী শিবিরে একটি অভিযান পরিচালনা কেন্দ্রে তাদের যুদ্ধ বিমান আঘাত হেনেছে।

ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের এসব সহিংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ইসরাইলের সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ও এসব হামলা ঠেকাতে ইসরাইলকে আরো বেশি কিছু করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

জাতিসঙ্ঘের সহায়তা বন্ধ : মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহতে অভিযান চালাতে ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এর আগে কাছাকাছি মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দেইর আলবালাহ এলাকা খালি করতে ইসরাইল নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই গাজায় সোমবার থেকে সাহায্য কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে জাতিসঙ্ঘ।

নিউ ইয়র্কে সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জাতিসঙ্ঘের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। চলতি বছরের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনী স্থল আক্রমণ শুরু করলে রাফাহ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এখান থেকে কার্যক্রম চালাতো জাতিসঙ্ঘ। অবশ্য কার্যক্রম স্থগিতের এই ব্যবস্থাকে অস্থায়ী বলেছেন ওই কর্মকর্তা। এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সৈন্য ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। তুলকারম শহরের কাছে নুর শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।

গণহত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান : এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ইসরাইলি হামলা গাজার ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ৩২০ দিন যাবৎ গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। তেলআবিবের আকাশ ও স্থল হামলায় গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু, যা উপত্যকাটির মোট শিশুর ২ দশমিক ৬ শতাংশ। দিনের হিসেবে ইসরাইলের হামলায় প্রতিদিন গড়ে ৫২ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৭২ জন নারী ও পুরুষকে হত্যা করেছে ইসরাইল। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরুর পর এখনো ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে তারা বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে যাদের কোনো হদিস নেই তাদের পরিবারের কাছে।

সূত্র: আলজাজিরা,রয়টার্স

Related Articles