গাজীপুরে পানি সংকটে ৯ ঘণ্টাও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন

গাজীপুরে পানি সংকটে ৯ ঘণ্টাও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া নতুন বাজার এলাকায় এসবিএস টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের তুলার গুদামে লাগা আগুন ৯ ঘণ্টাও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। পানি সংকটে ব্যাহত হচ্ছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে না পারায় বাড়ানো যাচ্ছে না ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট।

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী বিশেষ গাড়ির চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষ গাড়িটিতে ১১ হাজার লিটার পানি ধরে। আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের গাড়ির পানি ব্যবহার করেও তুলার গুদামে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পরে কারখানার সংরক্ষণ করা পানি ব্যবহার করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পার্শ্ববর্তী অপর আরেকটি কারখানায় মজুদ করা পানি ও পাশের একটি ডোবা থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। একপর্যায়ে পানি ফুরিয়ে গেলে বিশেষ পানিবাহী গাড়ি নিয়ে যাওয়া শ্রীপুর ফায়ার স্টেশনে। যানজট পার হয়ে সেখানে থেকে গাড়ি ভরে পানি আনতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। চারদিক থেকে কাজ করা গেলে আগুন ছড়াতো না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক সদস্য জানান, পানি সংকটে কিছু সময় বন্ধ ছিল আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। পরে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ পুনরায় শুরু হয়। এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউনিট বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। সাত ইউনিটের কাছে যে সরঞ্জাম আছে তা যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে অনেক আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। মূলত পানি সংকটের কারনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

ঘটনাস্থলের পাশেই বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন কায়সার হামিদ নামে এক ব্যবসায়ী। সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি জানান, দিনভর আগুনে আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছেন ভাড়াটিয়ারা। বিকেলে আগুন বাড়লে তিনিও পরিবারকে পাশের আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছেন। তার মতো অনেক পরিবারই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের ৮০ জন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, শ্রীপুরের কেওয়া নতুন বাজার এলাকায় এসবিএস টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের একটি কারখানার তুলার গুদামে বেলা সাড়ে ১১টায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি, জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি, কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ও ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। রাত সাড়ে ৮টায় পর্যন্তও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর জানা যাবে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, গুদামে অনেক তুলা মজুত ছিল। কিন্তু কী পরিমাণ তুলা মজুত ছিল তা নিশ্চিত নয়। এটা অনেক বড় একটা তুলার গুদাম। গুদামে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আমাদের সাতটি ইউনিট কাজ করলেও অনেক সময় লাগছে। আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করেছি। যে স্টোর নীতি আছে তা এখানে মানা হয়নি। একটা থেকে আরেকটা যে দূরত্ব থাকার থাকা সেটা এখানে নেই।

পানি সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, কারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যে সরঞ্জামাদি আছে সেভাবে আমরা কারখানায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাইনি। তাদের মজুত করা পানিতে খুব বেগ পাইনি। আমরা আশপাশের কারখানা থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি পাশের একটি পুকুর থেকেও পানি আনা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হবে বলে তিনি জানান।

কারখানায় মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আজমল হোসেন বলেন, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা ছিল। আগুন লাগার পরপরই পানির লাইনগুলো পুড়ে যায়। তবে কোথা থেকে আগুন লেগেছে তা তিনি জানাতে পারেননি তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *