গালাগালি সভ্য মানুষের ভাষা নয়

গালাগালি সভ্য মানুষের ভাষা নয়

গালাগালি সভ্য মানুষের ভাষা নয়

মুহাম্মাদ আইয়ুব : আমার সাবেক মসজিদের ক্যাশিয়ার সাহেব একদিন আমাকে বললেন, হুজুর! সমাজে গালি গালাজের ছড়াছড়ি! আপনি কি জুমা’র বয়ানে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন?

এ সপ্তাহে গালি গালাজ নিয়ে কড়া এক বয়ান দিবেন যাতে সমাজ থেকে এই মন্দ কাজটা তাড়াতাড়ি বিদায় হয়। কোষাধ্যক্ষ সাহেবের কথায় আমি খুব আপ্লূত হলাম। সমাজে এখনো উনার মতো ভাল মানুষ এখনো আছে ভেবে মনে মনে মাশাআল্লাহ বললাম।

শুক্রবার দিন টাইট করে এক বয়ান রাখলাম গালিগালাজের কদর্যতার উপর। মুসল্লিভাইদের করণীয় বর্জনীয় হাতে কলমে বুঝিয়ে দিলাম। বয়ান চলাকালীন ক্যাশিয়ার সাহেবের মাথা নাড়ানো আর এদিক সেদিক তাকিয়ে বাকি মুসল্লীদের পর্যবেক্ষণ করার দৃশ্য ভালই লাগল আলহামদুলিল্লাহ।

দুদিন পরের কথা, ক্যাশিয়ার সাহেব কাকে যেন আচ্ছামত ধোলাই দিচ্ছেন তাও আবার বাংলা ইংলিশ গালিগালাজের সাথে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম! হায়! হায়! একি দশা!! যার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমি দীর্ঘ বয়ান করলাম আর সেও মুসল্লিদের উপর বয়ান কেমন প্রভাব ফেলছে। তা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করল এখন কি-না সেই বুজুর্গ ব্যক্তিই গালাগালিতে তার দক্ষতার প্রমান দিচ্ছে?! ইয়া মাবুদ!!

আসলে গালাগালি আর বকাবাজি এই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। অত সহজে কি আর সে বাংলাদেশ ছাড়বে?! পরিবারে বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, অফিসে বস, বড় সাহেব, ছোট সাহেব, পিএস, পিয়ন,চাকর নওকর, দারোয়ান, ব্যবসায় মহাজন, ম্যানেজার কুলি, মজুর, শ্রমিক, রাস্তায় মালিক, সুপার ভাইজার, ড্রাইভার, হেল্পার ,কন্ডাক্টর। মোটকথা জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রত্যেক মানুষের চলমান জীবনে গালিগালাজ, বকাঝকা ছাড়া কোন কথা নাই,ভাষা নাই! এক্ষেত্রে অনেকে আবার স্মার্টনেস বজায় রাখতে দেশি ভাষায় বলেন না সরাসরি হিন্দি, ইংলিশে চলে যান। বকা বাজি আর গালাগালির ধরণ এখানে এ লেখায় উল্লেখ করলাম না! আমার তো আত্মমর্যাদা বোধ বলতে কিছু আছে তাই না?

প্রিয় পাঠক! নিজেই নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন না, কাজটা কি বিবেকসম্মত? ইজ্জতসম্মত? সমাজসম্মত? ধর্মসম্মত? সবখানে একই উত্তর না না না। তারপরও যে দেদারসে এই মন্দ কাজটি পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজনের সামনে অনবরত করে যাচ্ছি! কারণ আত্মমর্যাদাবোধ বলতে আমাদের ভিতর আর কিছুই যে এখন নেই! ডাস্টবিনের নোংরা আর আমাদের আজকের জীবনের মাঝে কোন ফারাক নেই।

একটি সুন্দর জীবনের জন্য আজ কোথাও কোন সংগ্রাম নেই; সংগ্রাম আছে, প্রতিযোগিতা আছে, দৌড়ঝাপ আছে অশ্লীলতার জন্য আর জঘন্য জীবন গঠনের জন্য ছি মানুষ! ছি!! গালিগালাজ আজ আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। মন্দ এ অভ্যেসটি আমাদের জীবনাচারের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিলে গেছে তাই আজকে আমাদের সবার জীবন উপর দিয়ে ফিটফাট থাকলেও ভিতরে ঘুণে খেয়ে ফেলেছে দু’চোখে আজ কোথাও শান্তি দেখছি না।

সবখানে অশান্তি আর অশান্তি! গালিগালাজময় জীবনে শান্তির আশা করা একদম বৃথা। শান্তি পেতে হলে আগে আত্মাকে পরিশীলিত করতে হবে, গালাগালি একদম করা যাবে না। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, গালাগালি সভ্য মানুষের ভাষা নয়।

কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন. ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকিওনা।’ {সুরা হুজুরাত,আয়াত নং ১১}

অপরদিকে মহানবী সাঃ বলেছেন, ‘কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি।’ [বুখারী, মুসলিম]

তাই বলছিলাম কি গালাগালি ছেড়ে ভাল মানুষ হওয়া যায়না?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *