চরমোনাই এবার জামাতি ফাঁদে

চরমোনাই এবার জামাতি ফাঁদে

চরমোনাই এবার জামাতি ফাঁদে

আমিনুল ইসলাম যশোরী

শেষমেষ কিন্তু চরমোনাই জামাতি ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে। বহু কষ্ট হয়েছে অবশ্য ওদের। কেননা, চরমোনাই তো গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি করে থাকে। তাঁরা কোনদিন জামাত- বিএনপির সাথে নেই। এমনকি জামাত – বিএনপি সমর্থিত হেফাজতের সাথেও নেই। নিজ গতিতে চরমোনাই ছুটে চলেছে। এজন্য চরমোনাইকে ধরা খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবে এবার এক কায়দায় ফেলে দিতে পেরেছে ওরা।

সেই মরহুম পীর সাহেব সৈয়দ ফজলুল করীম রহ.-এর সময় থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তথা চরমোনাই ওয়ালা একলা চল নীতিতে চলে আসছে। এমনকি তারা অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে। কিন্তু হঠাৎ করে চরমোনাই কে হেফাজতের কিছু বিচ্ছিন্ন নেতা কৌশল করে নিয়ে গেল। অকস্মাৎ ধোলাইপাড়ের মূর্তিবিরোধী আন্দোলন! সাধারণ পাবলিক কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিল না। কোনদিকে যাচ্ছে।

মূর্তি নির্মাণ হচ্ছে বহু বছর ধরে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মূর্তি বানিয়ে যাচ্ছে তারা। দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে মূর্তি। অবশ্য এর আগের সরকারগুলোও এ ধরনের মূর্তি বানিয়েছে। বাংলাদেশের জেলা- উপজেলায় হাজারো মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে তাদের। এতদিন কোন কথা হয়নি। কেউ বলেন নি। হঠাৎ করে এই মূর্তিবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করা, সাংগঠনিক ভাবে না গিয়ে হেফাজতের নেতাদের সাথে আন্দোলনে যাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটা কিন্তু ভাবার বিষয় ছিল।

জামাত কিন্তু হেফাজত নেতাদের বাগে নিয়ে এসেছিল বহু আগে। শুধু চরমোনাইকে আনতে পারছিল না। এবার চরমোনাইকে ঠিকই কিন্তু ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হল তারা।

২০১৩ সালে যখন হেফাজতের আন্দোলন হয়, তখন কিন্তু হেফাজতকে বোগলদাবা করে ফেলেছিল জামাত- বিএনপি। শাপলা চত্বরের আন্দোলন বলেন আর যে আন্দোলন বলেন, সব আন্দোলনে তারা আধিপত্য বিস্তার করেছিল। বিএনপি জামাত নেতাদের মঞ্চে প্রভাব খাটাতে দেখা গেছে। হাজার হাজার জামাত- বিএনপির ক্যাডার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল হেফাজতের মিটিংয়ে। বায়তুল মোকাররমে অগ্নিসংযোগ, রাস্তার দু-ধারের গাছ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে অস্থিতিশীল পরিবেশ বানিয়েছিল তারা। হুজুরদের আন্দোলনকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি বানাতে চেয়েছিল। আরো নানা মতলব ছিল তাদের। কিন্তু শেষে গিয়ে তারা ব্যর্থ হয়।

কিন্তু আল্লামা আহমাদ শফি রহ. বিষয়টা আঁচ করতে পেরে সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেননা, আল্লামা আহমাদ শফি সংঘাত চান নি। সরকারের সাথে কোন ফাইটে যেতে চান নি। তার কারণ, ফাইটে গেলে নিরীহ আলেম এবং মাদ্রাসার তালেবুল ইলমদের হেনেস্তা হতে হত আরও বেশি। জেলে বন্দী থাকতে হত। মাদ্রাসার তালিমের ব্যাঘাত আর দ্বীনের দাওয়াতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হত।

এবার হেফাজতের নতুন কমিটি। কিন্তু এবার তো আর আল্লামা শফি নেই। এখন কি আর নিরীহ ছাত্র এবং আলেমদের কথা কি কেউ চিন্তা করবে?

চরমোনাই নিজ গতিতে চলার কারণে সরকারের রোষানলে তাদের পড়তে হয়নি কখনো। কেউ মিটিং করতে না পারলেও চরমোনাই করেছে। কারো ওয়াজ মাহফিল না হলেও চরমোনাই ওয়ালাদের হয়েছে। যার কারণে হিংসার অনলে পুড়ে মরেছে জামাত এবং তার সহযোগীরা। এবার চরমোনাইকে হেফাজতের বিচ্ছিন্ন নেতাদের সাথে নামিয়ে দিয়ে চরমোনাইয়ের মাহফিল- মিটিং- মিছিল বন্ধ হবে। মোটামুটি ভাবে জামাতিরা যা চাচ্ছিল, সেটা কিন্তু পূরণ হতে যাচ্ছে, ওরা কিন্তু সাকসেস!

চরমোনাই এমন ভুল কোনদিন করে না। তবে কেন এবার এমন করল বুঝে আসেনি অনেকের। নায়েবে আমীর সাহেব কি এবার কারো সঙ্গে কি পরামর্শ করে যান নি সেখানে? যদি পরামর্শ করে যেয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু কথা নেই। (আল্লাহর সাহায্য কামনা করি)

আমাদের এত কিছু করার উদ্দেশ্য কিন্তু দ্বীনের দাওয়াত মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানো। মানুষকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দেওয়া। মহান আল্লাহর রাহে চলার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু সেটাও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু দুঃখজনক।

চরমোনাইয়ের পীর সাহেবের মাহফিল বন্ধ হল। নায়েবে আমীর সাহেবের মাহফিল বন্ধ। আরো অনেক ওলামা হযরতদের মাহফিল বন্ধ হচ্ছে। রাজধানীতে মিছিল- মিটিং নিষিদ্ধ। তাহলে আমরা দাওয়াতী কাজ করব কিভাবে? আমাদের দাওয়াতের কাজ বন্ধ হলে কি ভাল দেখাবে? ওদেরকে যেমন দৌড়ানী দিয়ে ঘরের মাচায় ওঠায়ে দিয়েছে, আমাদেরও সেই রাস্তা ধরতে হল।

ঐ হিংসুটেগুলো চাচ্ছিল, চরমোনাই এর মাহফিল বন্ধ হোক। চরমোনাই এর রাজনৈতিক প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাক। কারণ, চরমোনাই এই কয়েকবছরে যেভাবে এগিয়েছে, তাতে কারো কিন্তু সহ্য হচ্ছে না। চরমোনাই এর উত্থানে গাত্র দাহ শুরু হয়েছিল জামাতি এবং তার দোসরদের। ওরা তো চরমোনাই এর উত্থান দেখে নাম ব্যঙ্গ করে ডাকত।

নায়েবে আমীর সাহেবের নামে মামলা হয়েছে, তাতে দুঃখ নেই। কেননা, দ্বীনের রাস্তার মোজাহিদগণ মামলা – হামলা, জেল- জুলুম ভয় পায় না। কিন্তু দাওয়াতী মিশন বন্ধ হলে দুঃখ লাগবে সবার।

তবে আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। দাওয়াতের জন্য হেকমত- কৌশল এবং মাওয়ায়েজে হাসানা চাই। হুমকি- ধমকি দাওয়াতের মেযাযের বিরোধী। উত্তম আখলাক দ্বারা মানুষকে দ্বীনের রাস্তায় আনতে হবে।

আমাদের দেশে যারা মূর্তির পক্ষে কথা বলছে, এরা সকলেই মূর্খ। ইসলাম সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। পদ-পদবী এর লোভ, ক্ষমতার লোভ। অনেক নেতা- নেত্রীর ভাইরাল হওয়ার চিন্তা, এজন্য তারা আলেমদের বেশী বিরোধিতা করে যাচ্ছে। তাছাড়া কিছু আছে, যাদের মধ্যে দলান্ধতা কাজ করে। কিছু অতি উৎসাহী। এজন্য এদের ব্যাপারে আলেমদের অনেক চিন্তা করে এগোবার দরকার। বিশেষ করে এদের সাথে উত্তম আখলাক এবং মিষ্টি কথার মাধ্যমে সামনে চলা যেতে পারে। মুরুব্বীয়ানে কেরামদের অনেক মশওয়ারা এবং হেকমত অবলম্বন করবেন বলে মনে হয়।

বিশেষ করে চরমোনাইয়ের পীর সাহেবান আমাদের ছারে তাজ। বর্তমান আমাদের বাংলাদেশের মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষা তাদের গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি এবং একলা চলো নীতিকে সকলে বেশী পছন্দ করবে মনে হয়।

ঐ দিকে জামাত- বিএনপি কিন্তু মোঁচে তেল দিচ্ছে! কেননা, ওদের কোমর কিন্তু ভাঙা। দুইটার কোনটার কোমর সোজা নেই। ওরা এখন হুজুরদের উপর ভরসা করে আছে। যদি হুজুররা কিছু করে। কারণ, ওদের সকল ক্ষমতা কিন্তু শেষ। ২০১৩ সালে একবার তারা বড় আশা করেছিল। কিন্তু আল্লামা আহমাদ শফির সাহেবের দৃঢ়তার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আবার এবার ওরা নয়া কৌশল হাতে নিয়েছে মনে হয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে। কখনো বাতিলকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

মনে রাখতে হবে, আমরাতো ওদের মত জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা কোন সংঘাতেও যেতে চাই না। ওনারা তো চায় ভেজাল একটা বেঁধে যাক, সে সুযোগে যেন আলু পোড়া খেতে পারে। দ্বীনের দাওয়াত কিন্তু ওদের মাকসাদ নয়। মানুষের হেদায়েত ওদের মাকসাদ নয়। ওরা ক্ষমতায় যেতে চায়।

মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. বলতেন, নেতার পরিবর্তন নয়,নীতির পরিবর্তন চাই। সরকারে যেই আসুক,সেটা সমস্যা নয়।তবে নীতির পরিবর্তন হোক। মানুষ হেদায়েত হোক।সহী দ্বীনের উপর মানুষ চলুক।এটা কামনা করি।

কিন্তু দাওয়াতী মিশন যেন বন্ধ না হয়। দাওয়াতী কাজ অব্যাহত থাকুক। ” নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন করীব” আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *