চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ শেখ হাসিনার

চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ শেখ হাসিনার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আগামী অক্টোবরে পদ্মা রেলসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি অবশ্যই আপনার দেশে আসবো। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সফরের সময় নির্ধারণ করা হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট এই আশ্বাস দেন। বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় জোহানেসবার্গের হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।

মোমেন জানান, শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি চীন সফর করবেন, তবে সময় লাগতে পারে। কারণ, জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। তিনি নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (২২ আগস্ট) জোহানেসবার্গে পৌঁছান। ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত চলমান ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ফ্রেন্ডস অফ ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার সন্ধ্যার বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্রিকসে যোগদান এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিতে চীন সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বৈঠকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি ব্রিকসে যোগ দিতে পারলে আমি (শি জিনপিং) আপনাকে (শেখ হাসিনা) সবসময় সমর্থন করবো।’

জোনানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক (ছবি: ফোকাস বাংলা)
চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন। আমরা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা চাই না।’ তিনি চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চান বলেও জানান।

মোমেন জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন করতে চায়। কারণ, তারা এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে অনেকেই মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য।’

চীনের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান।

শি বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন, ‘একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত করতে চীন আপনাকে সাহায্য করবে।’

প্রধানমন্ত্রী চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন, যা এখন তহবিল সংকটের জন্য আটকে রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চীনা পণ্য আমদানি করছে, যেখানে চীন মাত্র ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করছে।

চীনের প্রেডেন্টের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ (ছবি: ফোকাস বাংলা)

চীনের প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করেছেন, চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ঘাটতি হ্রাস করার উদ্যোগ নেবেন। তিনি জানান, চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কিছু চীনা বিনিয়োগ এলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমবে। তিনি দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

উত্তরে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চীনে তাজা ফল, যেমন– আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তাজা শাকসবজি এবং গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য রফতানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শি জিনপিং এসব বিষয় ‘অবশ্যই বিবেচনা’ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনে পড়াশোনার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং শি জিনপিং বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। সূত্র: বাসস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *