চূড়ান্ত পূর্ণতার অভিধায় অভিষিক্ত যিনি

চূড়ান্ত পূর্ণতার অভিধায় অভিষিক্ত যিনি

  • ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

রাব্বি সাল্লি ওয়াসাল্লিম দাইমান আবাদা আলা হাবীবিকা খায়রিল খালকি কুল্লিহিমি।

পৃথিবী অনবরত দিন গুযরান করে চলেছে, ‘বেগে ধায় নাহি রহে স্থির’। এই কাল চক্রাতিক্রমে বহু বীর, বহু রাষ্ট্রনায়ক, অনেক কবি- সাহিত্যিক, মেলা বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক, সমাজবিদ এসেছেন গিয়েছেন। বহু স্মরণীয় জনের আগমন ও প্রস্থান ঘটেছে। প্রত্যেকেরই অবদানে সমৃদ্ধ ধন্য সসাগরা এই পৃথিবী । তবে এদের প্রতিজনই ছিলেন একেক দিকের, একেক ক্ষেত্রের। বিজ্ঞান ও দর্শনের ক্ষেত্রে যদি কাউকে দেখা গেছে এভারেষ্ট শৃঙ্গতায় মহিয়ান, কিন্তু সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি তৃণপত্রে নিম্নতায় বক্ষমান । কেউ হয়ত বলকুশলতায় গরীয়ান বীরবাহু বটে কিন্তু মেধা ও মননশীলতায় জানুলগ্ন। রাষ্ট্র পরিচালনা দক্ষতায় যিনি শীর্ষাচারী তিনিই আবার অন্যদিকে লজ্জাবতি গাছের মতই ম্রীয়মান, পরিপূর্ণতার মুকুট বর্জিত প্রাকৃতজন ।

হ্যাঁ, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই পরিপূর্ণতার সওদা নিয়ে একজন মহাপ্রাণ এলেন। মানব সৃষ্টির পরিপূর্ণতার বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক, যাহেরী ও বাতেনী যত দিক আছে, যত ক্ষেত্র আছে, সব দিক, সব ক্ষেত্রের পরিপূর্ণতা বিধানে তিনি এলেন। আখলাক ও নৈতিক চরিত্রের দিকে যেমন তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা ‘ইন্নামা বুইছতু লি উতাম্মিমা মাকারিমাল আখলাক’, মাকারিমে আখলাক নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতাবিধানে আমার প্রেরণ, তেমনি শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেও তাঁর ঘোষণা অস্পষ্টতাবিহীন। আকাঈদ, ইবাদত, আখলাক, মুআমালাত, মুআশারাত সবকিছুই এখানে দ্ব্যর্থহীন পরিপূর্ণতায়, দ্বিধাহীন চূড়ান্ততায় অভিসিক্ত।

পৃথিবীর অনেকেই অনেক অভিধায় খ্যাত হয়েছেন, সফীউল্লাহর উচ্চ বিশেষণে যেমন খ্যাত, আবার খলীলুল্লাহ হওয়ার বৈশিষ্ট্যে বাঙময়। এদিকে কলীমুল্লাহ বিশেষণে যেমন প্রাপ্ত আছেন তেমনি আছেন রুহুল্লাহর শীর্ষ মার্গতার স্থানে দ্বীপ্তিমান।

কিন্তু একাই ধারণ করা ইকমাল ও ইমামের অধিকারী আর আছে কোন মহা প্রাণ? আল ইয়াউমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম ও আতমামতু আলাইকুম নিমাতী ওয়ারাযিতু লাকুমুল ইসলামা দীনা। এমন কে যার ব্যক্তি জীবন পরিপূর্ণ, আকাঈদ ও ইবাদতের রূপ পরিপূর্ণ। যেমন ছিল তাঁর সমাজ জীবন পরিপূর্ণ, রাজনীতি পরিপূর্ণ, অর্থনীতি পরিপূর্ণ। মানব জীবনে উচ্চ মার্গতার দীদার ও রিযায়ে ইলাহী থেকে নিয়ে একান্ত তুচ্ছ বায়তুল খালার আদাবও এখানে পরিপূর্ণতায় বাঙময়। কোথাও কমতি নেই, বিচ্যুতি নেই, দ্বিধাময়তা নেই । আছে কেবল একই সুর, একই মাতম আল ইকমাল, আল ইতমাম— চূড়ান্ততা ও পরিপূর্ণতা। তাইতো তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ।

সাথে সাথে একক বৈশিষ্ট্য খাতামিয়াত ও সর্বশেষ হওয়ার গৌরবেও তিনি গৌরবান্বিত। কারণ চূড়ান্ততার পর তো আরও কেউ হওয়া, আরও কিছু হওয়া অসম্ভব, অবাস্তব, অকল্পনীয়। তাই একান্ত স্পষ্টতার সঙ্গে জোরালোভাবে ঘোষিত হয়েছে – আনা খাতামুন্নাবিয়্যীন লা নাবীয়্যা বাদী, আমিই শেষ নবী, আমার পর কেউ নেই।

শুধু তাই? বাহ্যিক অবকাঠামো, আঙ্গিক পরিপূর্ণতাও এখানে চূড়ান্ত । এমন মায়াময় প্রশান্ত আঁখি পল্লবের অধিকারী আর কেউ নেই, কেউ নেই । এমন আকাশ উদার ললাট, এমন সাগর বিস্তৃত বক্ষ, এমন জ্যোতিশীর্ষ নাসিকাও কারো নেই, কারো নেই। এমন সুঠাম সতেজ দেহবল্লরী কারো নেই, কারো নেই । এমন মায়াময় বর্ণাভা কারো নেই, কারো নেই। সুন্দরম, মদিরম, মনোরম।

সবদিক দিয়ে এক ইনসান-ই-কামিল- এক আবদ-ই-কামিল। কেবল নিজেই নন অন্যকেও কামিল বানানোর সুনিপুণ শিল্পী এক, দক্ষ এক মহা কারিগর । এক উসওয়াতুন হাসানা । এই পরিপূর্ণতার কাছে অপরিপূর্ণরা আসছে, ত্রুটিযুক্তরা আসছে আর পরিপূর্ণ ও ত্রুটিহীন হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ।

ইবনে আবী কুহাফা এলো আর ‘আরহামুহুম’ হয়ে আসদাকুহুম সিদ্দীকীন হয়ে বের হল আবু বকর রা., ইবনুল খাত্তাব নামের এক নৃশংস, এক নির্মম এল মাথা নিতে কিন্তু বিশ্বজগত সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করল আশাদ্দুহুম ফী আমরিল্লাহ-এর মহা পরিপূর্ণতায় অভিসিক্ত হল সেই ইবনুল খাত্তাব ছাগল রাখাল উমর রা., ইবন আফফান এল আর আইয়াহুম’ অভিধায় বের হল উসমান রা.। ইবন আবী তালিব এল আযাহুম’-এর পরিচয়ে পরিপূর্ণতায় খ্যাত হল আলী রা.।

এমন আরো কত, আরো কত। গুনতে গুনতে হয়ে যায় এক লক্ষরও উপরে। যারা হলেন উসওয়াতুন হাসানার পরিপূর্ণতার চূড়ান্ত নমুনা, সব সমালোচনার উর্দ্ধের ত্রুটিহীনদের এক মহা জামাত। মা আনা আলাইহি ও আসহাবীর খোশনসীবে আপ্লুত ।

তিনি রেখে গেলেন কিয়ামত পর্যন্ত সেই কাঠামো। সেখানে যে আসবে মানুষ হবে, ইনসানে কামিল হবে, আবদান শাকুরান হবে। সেই কাঠামো চির অম্লান, চির ভাস্মর, আপন ঔজ্জ্বল্যে দ্যুতিময়, দিপ্তীময়। সে এক প্রোজ্জল সীরাজাম মুনীরা। এক দীপ থেকে শত দীপ, লাখো দীপ, অযুত দীপ জ্বলল যেখানে ।

এখনও তাই হবে। হে পৃথিবী যে আমার সন্তানের জন্য দুঃসহ, এখনই আস এই কাঠামোর কাছে, এখনই আস এই সীরাজাম মুনীরার কাছে। দীর্ঘদিন বয়ে গেল আজ। এক মহাধ্বংসের মূলে উপনীত এই সসাগরা । পরীক্ষা হয়েছে বার বার, আর কোন উপায় নেই, দুসরা কোন পথ নেই ।

কে সেই মহাপ্রাণ। কোন সে পরিপূর্ণময়, মনোহর, মনোরম, সুন্দরম। আর কেউ নয়, বা’দ আয বুযুর্গ তুঈ কিচ্ছা মুখতাছার, খোদার পরে তুমিই শ্রেষ্ঠ সংক্ষেপে মোরা এই তো জানি। আরবী, উম্মী, আমেনা কে লাল, মুহাম্মদ মক্কী, মাদানী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।

নবীজিকে নিয়ে গাওয়া জুনাইদ জামশেদের ‘বাদরুদ্দুজা‘ নাতটি শুনুন।

আরও পড়ুন: সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *