জরুরি খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ওষুধের সমন্বয়

জরুরি খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ওষুধের সমন্বয়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে অনেক ডায়াবেটিক রোগীও রোজা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ওষুধের সমন্বয় ও ঝুঁকিগুলো জানা জরুরি। অন্যথায় যেকোনো বিপত্তি ঘটতে পারে, বিশেষ করে যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিসজনিত কিডনি, হার্ট, লিভারের সমস্যা রয়েছে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ওষুধের সমন্বয় জরুরিগতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডাব্লিউএমজিএল) মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ কথা বলেন। রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ও কালের কণ্ঠ’র যৌথ উদ্যোগে ‘রমজানে ডায়াবেটিক রোগীর করণীয়’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি।

এর মধ্যে এক কোটি মুসলিম। এসব রোগী নানা ঝুঁকি নিয়ে রমজানে রোজা রাখে। সুস্থভাবে রোজা রাখতে হলে ডায়াবেটিক রোগীর প্রস্তুতিটা শুরু করতে হবে আগে থেকে। চিকিৎসকের কাছ থেকে ঝুঁকিগুলো জানা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা জানা জরুরি।

অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান বলেন, রোজা পালনের সময় যদি ১৪ ঘণ্টার বেশি হয় বা গরম আবহাওয়া থাকে, সে ক্ষেত্রে শরীরে পানিশূন্যতা ও লবণস্বল্পতার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এতে স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশিদের রোজা রাখার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের ৯৮ শতাংশই রোজা রাখতে চায়। রোজার আগে একজন ডায়াবেটিক রোগী যে পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়েছে, রোজায় একই ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ডায়াবেটিক সব রোগীর কমবেশি ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে যাদের কিডনির অবস্থা অনেক খারাপ। যাদের ঘন ঘন রক্তের শর্করা বেড়ে যায় বা শর্করাস্বল্পতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তারা কিন্তু ঝুঁকিতে আছে।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, ডায়াবেটিক রোগীদের রোজার মাসে সুনিয়ন্ত্রিণভাবে ওষুধ খাওয়া জরুরি। সকালে যে ওষুধ খেতে হয়, সময় বদলে সেটা ইফতারের পর খেতে হবে। রাতে কোনো ওষুধ থাকলে সাহরির সময় খেতে হবে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এন্ডাক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম সাইফুদ্দিন বলেন, হাত-পা কাঁপুনি, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘামা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনির মতো ঘটনা ঘটলে বুঝতে হবে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ রোগী। এ ক্ষেত্রে আমরা রোজা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিই। এ সময় রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ ৩.৯ মিলিমোলের নিচে নেমে যায়, যা ঝুঁকিপূর্ণ।

বিএসএমএমইউয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফা মোস্তারী বলেন, রমজান মাসে জীবনচক্রের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। খাবারের ধরন ও সময় এবং ঘুমের সময় পরিবর্তন হয়। এ সময় ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে যারা দিনে একাধিক ইনসুলিন নিয়ে থাকে, তাদের ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি। তারা চাইলে সকালের পরিবর্তে ইফতারের পর সমপরিমাণ ইনসুলিন ব্যবহার করবে।

যাদের দুই বেলা ইনসুলিন নিতে হয়, তাদের রাতে ইনসুলিনের অর্ধেক বা তিন ভাগের এক ভাগ সাহরির সময় নিতে হবে।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সহযোগী অধ্যাপক ডা. আফসার আহাম্মদ (মেরাজ), এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আহসানুল হক আমিন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মির্জা শরিফুজ্জামান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী সার্জন আফিয়া যায়নব তন্বী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. সৈয়দ আজমল মাহমুদ, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহমেদ ইফরাদ বিন রওনক ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ম্যানেজার (বিজনেস ইউনিট) মো. আসাদুজ্জামান আসাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *