পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রতি বছর বিশ্বের সমুদ্র ও মহাসাগর থেকে ৬০০ কোটি টন বালু ও অন্যান্য পলি জাতীয় পদার্থ তোলা হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।
এতে এই পদার্থ উত্তোলনকে জীববৈচিত্র্য ও উপকূলবাসীর জন্য ধ্বংসাত্মক বলে সতর্ক করা হয়।
সমুদ্র থেকে বালুসহ অন্যান্য পদার্থ উত্তোলনের বিষয়ে প্রথমবারের মতো তথ্য ব্যাংক চালু করেছে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি)।
সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বালু উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে, এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।
ইউএনইপির বিশ্লেষণ কেন্দ্র জিআরআইডি-জেনেভা প্রধান প্যাসকেল পেদুজ্জি বলেছেন, “অগভীর সমুদ্র খনন কার্যক্রম ও বালু উত্তোলনের পরিবেশগত প্রভাবের মাত্রা উদ্বেগজনক।”
তিনি জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব, পানির অস্বচ্ছতা ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপর শব্দের প্রভাবের বিষয়টিও তুলে ধরেন।
নতুন এই তথ্য ব্যাংক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশে বালু, কাদামাটি, পলি, নুড়ি ও পাথরের ড্রেজিং কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করবে।
উত্তর সাগর ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের মতো অঞ্চলে বালু উত্তোলনকারী জাহাজের অবস্থান ও কার্যক্রম শনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত (এআই) জাহাজের জন্য স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ সিস্টেম (এআইএস) সংকেত ব্যবহার করবে এই সংস্থাটি।
পেদুজ্জি বলেন, “জাহাজ থেকে পাওয়া সংকেতের মাধ্যম পৃথিবীর প্রতিটি জাহাজের গতিবিধি নির্ণয় করা যায়। এসব এসব তথ্য বিশ্লেষণে সাহায্য করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০% জাহাজের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।”
সংস্থাটির ধারণা, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবেশ থেকে প্রতি বছর চার থেকে আট বিলিয়ন টন সামুদ্রিক বালু ও অন্যান্য পলি উত্তোলন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “তবে এটি ইতিমধ্যে স্পষ্ট, বালু উত্তোলনের মাত্রা কমছে না, বরং দিনদিন ভয়ানকভাবে বাড়ছে।”
জাতিসংঘ এ বছরের শেষ নাগাদ ২০২০-২৩ সালের পরিসংখ্যান প্রকাশ করার লক্ষ্য নিয়েছে।
পেদুজ্জি আরও বলেন, প্রতি বছর বিশ্বের মহাসাগরে পলির প্রাকৃতিক পরিপূরণ হার ১০-১৬ বিলিয়ন টনের কাছাকাছি আসছে।”
তিনি বলেন, “বালু উত্তোলনকারী জাহাজগুলো সাগরের বুক খুঁড়ে বালু তুলে আনছে। সমুদ্রতলের অণুজীবও উঠে আসছে বালুর সঙ্গে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।”
জাতিসংঘ বলেছে, নতুন ডাটা প্ল্যাটফর্মটি বালু উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। তাদের পরিবেশবান্ধব উপায়ে বালু সংগ্রহে সাহায্য করতে পারে।
ইউএনইপি বলেছে, সমুদ্র থেকে বালুজাতীয় পদার্থ সংগ্রহে উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং অগভীর সমুদ্র খনন হ্রাসে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সংগঠনটি বালু উত্তোলনের নিয়ম-কানুনে ব্যাপক হেরফের লক্ষ করেছে। এজন্য তারা ড্রেজিংয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়াও উপকূল, পরিবেশ ও অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সৈকত থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে এই সংস্থাটি।