জাতীয় কবির জন্মদিনে | আবু্দ্দারদা আব্দুল্লাহ

জাতীয় কবির জন্মদিনে | আবু্দ্দারদা আব্দুল্লাহ

আজকে ১২ ভাদ্র আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এই দিনে জাতীয় কবিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বহুমাত্রিক যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। চায়ের দোকানী, লেটো দলের গায়ক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাহসী সৈনিক, বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিক এবং কবি ইত্যাদি তাঁর পরিচয়। তবে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচয়ে তিনি সবখানে সমাদৃত।

জীবনে তিনি অনেক খ্যাতি পেয়েছিলেন কিন্ত এই খ্যাতিগুলোই তার জন্য মরণব্যাধী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যার কারণে ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় জাতীয় কবির শেষ দিনগুলো সুখে কাটেনি, খুবই কষ্টে কেটেছে। কারণ একশ্রেণির সাম্প্রদায়িক মানুষের কাছ থেকে তিনি নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের, মুশরিক ইত্যাদি বহু ট্যাগ খেয়েছিলেন। তবে জাতীয় কবির সৌভাগ্য বলতে হবে কারণ তিনি মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুকের যুগে জন্মাননি তাহলে জাতীয় কবির খবরই ছিলো। ট্যাগ কেন খেতেন তার একটা ব্যাখ্যা করছি, কাজী নজরুল একবার তার ভাষণে বললেন, “যেই খোদা বিপদে আপদে কাউকে দেখে না, সে খোদার বুকে লাথি মারি”। সাথে সাথে হেকমত না জানা মৌলভীগণ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। চতুর্দিক থেকে ফতোয়া দেয়া শুরু হলো, কবিকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা করে ফেলো। লাঠি দিয়ে গুতো দাও, কবির মাজা ভেঙে ফেলো। কবি নজরুল নিপাত যাকসহ আরো যে কত কি?

শেষমেষ কবি বিরক্ত হয়ে ঠুয়োঠাওয়া ফতোয়াদাতা মোল্লা মৌলভীদেরকে অনুরোধ করে বললেন, একটা সমাবেশ করার জন্য। কবি কেন খোদার বুকে লাথি মারতে বলেছেন সেটা জনসম্মুখে ব্যাখ্যা করবেন। কবির কথামতো সমাবেশের আয়োজন করা হলো। জাতীয় কবি আল্লাহ পাকের প্রশংসা করে ভদ্রতার সাথে উপস্থিত লোকদেরকে জিগ্যেস করলেন, বলুন তো খোদা নিরাকার কি নিরাকার না?

সবাই জোর আওয়াজে বললো, হ্যাঁ, খোদা নিরাকার, তাঁর কোন আকার নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই।

কাজী নজরুল বললেন, এবার তাহলে আমার বক্তব্য শুনুন, খোদা যদি নিরাকারই হয়ে থাকেন তাহলে খোদার বুক আসলো কোথা থেকে? যার আকার আছে তার না বুক থাকে সুতরাং বুক আছে প্রতিমার, মূর্তির। আর মূর্তি আমাদের কোন আর্জি কবুল করতে পারে না এই কারণে বলেছি খোদার বুকে লাথি মারতে। উপস্থিত ফতোয়াদাতাগণ জিহ্বায় কামড় দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করলেন। এ ছাড়া তাদের দ্বিতীয় কোন উপায় ছিলো না। দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমানে হেকমত, প্রজ্ঞা বুঝার মত মানুষের অভাব। সমাজের চতুর্দিকে মোল্লা মুফতির অভাব নেই; কিন্ত কয়জনের ভিতরে সমাজ বুঝে কাজ করা কিম্বা ফতোয়া দেয়ার অভিজ্ঞতা আছে? সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি দেখেশুনে এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে যিনি ফতোয়া দিতে পারবেন তাঁদেরকে জাতি আজীবন মনে রাখবেন কিন্ত মনে রাখার মত এরকম শ্রদ্ধেয় মুফতি দুএকজন ছাড়া ইতিহাসের পাতায় কাউকে তেমন একটা দেখা যায় না। যার কারণে কবি নজরুল এসবের ব্যাপারে খুব সোচ্চার ছিলেন। মসজিদের জোচ্চুরি করা খাদেমদের নিয়ে লেখা তার কবিতাটা তো বিখ্যাত হয়ে আছে। কত শত ইতিহাস মনে পড়ছে কিন্ত মনে পড়ছে কিন্ত লেখার মত সাহস নেই, কুলিয়ে উঠতে পারি না।

কবি নজরুলের মত আমিও যদি আবার কাফের ট্যাগ খেয়ে বসি? সমাজের গুটিকয়েক মানুষের সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে আমি বড় ভয় পাই। আজকের এইদিনে আমাদের জাতীয় কবির জন্য শ্রদ্ধা রইলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *