জাদুকরি মোস্তা, মনে পড়ে স্টেইনকে!

জাদুকরি মোস্তা, মনে পড়ে স্টেইনকে!

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ২৩ সেপ্টেম্বর আবুধাবিতে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের নাটকীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা ছিলো এক কথায় অসাধারণ। মুস্তাফিজের শেষ ওভারটা ছিলো ম্যাজিক মোমেন্ট। এবারের এশিয়া কাপে এই আফগানদের বিপক্ষেই প্রথম ম্যাচ হারার পর গতকালের ম্যাচটা যতোটা না টিকে থাকার তারচেয়ে বেশী ছিলো ইজ্জতের। সাম্প্রতিক সময়ে বাঘা বাঘা দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ যেখানে ক্রিকেটের পরাশক্তি হিসেবেই নিজেদের জানান দিচ্ছে, সেখানে আফগানদের সঙ্গে পরপর দু’ম্যাচ হেরে যাবে! সেটা মেনে নেয়া আর যাই হোক স্বাভাবিক বিষয় নয়।

তবুও একরকম হারতেই বসেছিলো বুঝি। শেষ ওভারে দরকার ৮ রান। আধুনিক ক্রিকেটে যা নিতান্তই সামান্য। বোলাররাই পিটিয়ে পাটিয়ে এমন ম্যাচ জিতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আজকাল। কিন্তু তা টাইগারদের বিপক্ষে তা আর হবার নয়। শেষ ওভারে যে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল তাই বাংলাদেশের ত্রাতা হয়েই এসেছিলেন ফিজ। সেনওয়ারি,রশিদরা একরকম অসহায় অাত্মসমর্পন করেছেন ফিজের কাছে। মোস্তার জাদুকির শেষ স্পেলেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়।

মোস্তাফিজের এ স্পেল দেখে মনে পড়ে যায় ২০১৪-তে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নিউজিল্যান্ডের সেই ম্যাচের কথা। সেবার সবাই ধরেই নিয়েছিলেন যে ম্যাচটি জিততে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। সেটা অবাস্তব ছিল না অন্তত যখন শেষ ছয় বল থেকে মাত্র সাত রান প্রয়োজন ব্লাক ক্যাপসদের। সঙ্গে হাতে যথেষ্ট উইকেটও ছিল। জেপি ডুমিনির অনবদ্য ৮৬ রানে ভর করে ১৭০ রান করা প্রোটিয়াদের জবাব দিতে নেমে ভালোই এগোচ্ছিল কিউইরা। কিন্তু উইলিয়ামসন আর রস টেলরের ভালো শুরুর পরও মিডল অর্ডারে আর সেটা ধরে রাখতে পারেনি। তারপরও শেষ ওভারে মাত্র সাত রান দরকার ছিল। ডেল স্টেইনের করা সেই ওভার এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা শেষ ওভার বললেও হয়ত অত্যুক্তি হবে না। চতুর্থ বলে একটি বাউন্ডারি হজম করলেও বাকি পাঁচ বলে তিন উইকেট তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের জয় নিশ্চিত করেন স্টেইন।

তাই ১৪-র পর ১৮-তে এসে ক্রিকেট বিশ্ব যেন শেষ ওভারে তেমনই আরেকটি ভয়ংকর স্পেল দেখলো। তবে এবারের নায়ক স্টেইন নয় টাইগার ফিজ। মুস্তাফিজও অবশ্য এটিকে তার জীবনের সেরা ক্রিকেটীয় মুহুর্তের একটি মানছেন। এ কথা টুইট করে নিজেও জানিয়েছেন তিনি। এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই বোলিং ভরসা লিখেছেন, ক্রিকেট জীবনের অন্যতম সেরা এই মুহূর্তকে বর্ণনা করার মতো ভাষা তাঁর নাকি জানা নেই, ‘গতকাল ওটা ছিল আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। মুহূর্তটি বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত আপনাদের সবার ভালোবাসা পেয়ে।’

আবুধাবির গরমে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না মোস্তাফিজের জন্য। পায়ের পেশিতে টান ধরেছিল। নিজের বোলিং-অস্ত্রগুলোও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছিলেন না। তারপরেও শেষ ওভারে ৪ রানের বেশি নিতে দেননি আফগানদের। ম্যাচ শেষে মোস্তাফিজকে নিয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস গোপন করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি, ‘ম্যাচের শেষ দিকে মোস্তাফিজ ছিল রীতিমতো জাদুকর।’ মোস্তাফিজের প্রশংসা ঝরেছে গতকালকের ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠেও। মোস্তাফিজের শেষ ওভারের স্তুতি বর্ণনা করেছেন একটি বাক্যেরই, ‘এ যুগে ৬ বলে ৮ রান কোনো ব্যাপারই না।’

তবে কথা সেটাই, বাংলাদেশের এই ক্রিকেট সেনসেইশন দিনদিন আরো পরিণত হচ্ছেন। অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করছেন নিজের ভান্ডারকে। বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের শাসন করার যে অমিত সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভাব হয়েছিলেন তিনি, তা যে এখনো ফুরিয়ে যায়নি তারই জানান দিলেন আরেকবার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *