জাপানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরীক্ষামূলক পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি চালু

জাপানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরীক্ষামূলক পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি চালু

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ভবিষ্যৎ শক্তির চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরীক্ষামূলক পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি চালু করা হয়েছে জাপানে। ফিউশন আর ফিশন শব্দের মধ্যে কিন্তু বেশ পার্থক্য রয়েছে। ফিউশন পদ্ধতি বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। একটি পরমাণুকে বিভক্ত করার পরিবর্তে দুটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে যুক্ত বা ফিউজ করে এ পদ্ধতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তা ছিল ফিশন ধর্মী। ফিশনপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে সারা বিশ্বে নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে।

২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমাতে সুনামির আঘাতে ফুকুশিয়া দাইচি রিঅ্যাক্টর নষ্ট হয়ে যায়। এতে তেজস্ক্রিয়তা পানির মাধ্যমে সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হলেও এ দুর্ঘটনার ফলে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৩০০ জন মারা গেছেন।

নতুন ফিউশনধর্মী পারমাণবিক চুল্লির নাম জেটি-৬০এসএ। এর প্রধান লক্ষ্য হলো পারমাণবিক শক্তি নিরাপদে তৈরি ও বৃহৎ আকারের শক্তিকেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। কার্বনমুক্ত উৎস হিসেবে ফিউশনের সম্ভাব্যতা যাচাই করার মাধ্যমে নতুন সুযোগ তৈরির পরীক্ষায় কাজ করবে চুল্লিটি। টোকিওর উত্তরে নাকা নামের এলাকা তৈরি করা হয়েছে এই চুল্লিটি। ছয়তলা উঁচু চুল্লিকে দূর থেকে ডোনাটের মতো মনে হয়। নাকা ফিউশন ইনস্টিটিউটের এলাকায় চুল্লিটির গবেষণার কাজ চলছে। এই চুল্লি ২০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের উত্তপ্ত প্লাজমা ধারণ করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মধ্যে একটি যৌথ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই চুল্লিটি তৈরি করা হয়েছে।

একই রকম আরেকটি চুল্লি ফ্রান্সে নির্মাণের কাজ চলছে। সেই চুল্লিটির নাম ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর (আইটিইআর)।

জাপানের চুল্লিটির লক্ষ্য হচ্ছে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসকে ভারী উপাদান হিলিয়ামের সঙ্গে ফিউজ করা। এই প্রক্রিয়ায় তাপের আকারে শক্তি নির্গত হয়। সূর্যের মধ্যে একই ধরনের বিক্রিয়া দেখা যায়। ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইউরোপ ও জাপানের মধ্যে বর্ডার অ্যাপ্রোচ চুক্তির আওতায় চুল্লিটি তৈরির কাজ শুরু হয়।

প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তা স্যাম ডেভিস জানান, জেটি-৬০এসএ আমাদের ফিশন শক্তি নিয়ে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। এই প্রকল্পে ইউরোপ ও জাপানের পাঁচ শর বেশি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী কাজ করছেন। ৭০টির বেশি কোম্পানির চুল্লি নির্মাণে সহযোগিতা করছে। বেশ ধীরগতি দেখা যায় চুল্লির নির্মাণে। ২০১১ সালের টোহোকু ভূমিকম্পের কারণে কাজে গতি কমে আসে। চুল্লির পুরো কাঠামো ২০২০ সালের মার্চে সংযুক্ত করা হয়। ২০২১ সালে প্লাজমা পরীক্ষার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি পায় চুল্লিটি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি কমিশনার কাদরি সিমসন বলেন, ‘জেটি-৬০এসএ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত টোকামাক। টোকামাক এমন একটি মেশিন, যা চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে প্লাজমাকে ডোনাটের মতো গোলাকার রিং আকারে সীমাবদ্ধ করে। এই বৃত্তাকার আকৃতিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় টরাস বলা হয়। ফিউশন জ্বালানি ইতিহাসের জন্য একটি মাইলফলক। ফিউশনের এই শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে শক্তির বড় একটি উৎস হিসেবে বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ববর্তী জেটি-৬০ অবকাঠামো ব্যবহার করে নতুন এই চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। এসএ-এর অর্থ হলো ‘সুপার, অ্যাডভান্সড’। চুল্লির বিভিন্ন পরীক্ষায় সুপারকন্ডাক্টিং কয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। প্লাজমার বিভিন্ন বিষয় চুল্লিতে পর্যবেক্ষণ করা হবে।’

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *