জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রিমান্ড শেষে কারাগারে

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রিমান্ড শেষে কারাগারে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদির আদালত এ আদেশ দেন।

এদিন তিন দিনের রিমান্ড শেষে শফিকুর রহমানকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল বাসার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর আদালত তার সাত দিনের ও ২১ ডিসেম্বর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করার বিষয়টি জানান।

এর আগে জামায়াতের আমিরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ রেলগেটে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে জামায়াতের পক্ষ থেকে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ দাবি করে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পরপরই ফ্যাসিস্ট সরকার অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। আমরা এই গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে আমিরে জামায়াতের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘মূলত জনগণের ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেই আমিরে জামায়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি, সরকারের এই গ্রেফতার, হামলা-মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য চলমান এই আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না।’

এর আগে গত ৯ নভেম্বর সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় ডা. শফিকুর রহমানের ছেলে ডা. রাফাত সাদিককে। গ্রেফতারের পর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন রাফাত সাদিক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার হওয়া তিন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম বেরিয়ে আসে।

উল্লেখ্য, ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হন।

ডা. শফিক ১৯৮৬ থেকে ৮৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ১৯৮৯ থেকে ৯১ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এবং ১৯৯১ থেকে ৯৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের আমির, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনোনীত হন শফিক। ২০১০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হন। ২০১৭ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি জামায়াতের আমির পদ পান। শফিকুর রহমানের স্ত্রী ডা. আমিনা শফিক অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *