পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জার্মানিতে ভয়াবহ রাজনীতির স্বীকার ‘মোহাম্মদ’ নাম টি৷ কট্টর ডানপন্থি দল এএফডি এবার এই নামটি নিয়ে রাজনীতি করছে৷ গত ২রা মে সোসাইটি ফর দ্য জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ নামের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি জরিপ প্রতিষ্ঠান জার্মানদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুদের নামের বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করে৷
এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালে জার্মানদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ছিল মেয়েশিশুর জন্য ‘মারি’ এবং ছেলে শিশুর জন্য ‘পল’৷
প্রতিবেদনটি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে প্রতিবেদনটিতে বার্লিনের ২২ হাজার নবজাতকের মধ্যে প্রতি ২৫ জনে একজনের নাম ‘মোহাম্মদ’ রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করার কারণে।অবশ্য এর পেছনে কয়েকটি গণমাধ্যম কর্মীদের উন্মত্ততাও কাজ করেছে। বার্লিনের দৈনিক সংবাদপত্র টাগেসস্পিগেল শিরোনাম করেছে ‘কার্ল-হাইনৎসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় মোহাম্মদ’৷ ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য ডেইলি মেইল উল্লেখ করেছে, ‘‘জার্মানির ১৬ রাজ্যের ৬টিতে ১০ জনপ্রিয় নামের একটি মোহাম্মদ৷” তবে এসব সংবাদের কোনোটিতেই আসল তথ্য তুলে ধরা হয়নি৷
কট্টর ডানপন্থি অভিবাসনবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-র সংসদীয় দলের উপনেতা আলিসে ভাইডেল জার্মান ট্যাবলয়েড বিল্ড-এর প্রতিবেদন টুইটারে শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘‘কী আসে যায়! গত বছর বার্লিনে ছেলে নবজাতকের জন্য সবচেয়ে পছন্দের নাম ছিল মোহাম্মদ…ক্রমবর্ধমান প্রবণতা৷”
এএফডির বার্লিন শাখার বক্তব্য আরো স্পষ্ট৷ টুইট অ্যাকাউন্টে একটি ছবি শেয়ার করেছে দলটি৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে হিজাব পরা এক শিক্ষক স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন৷ ছবিটির সাথে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে, ‘‘ইসলামীকরণ বন্ধ করুন৷ কেবলমাত্র এএফডির সহায়তায়৷”
অবশ্যই এর কড়া জবাবও দিয়েছে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ সাওসান শেবিল, এএফডির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘আমার বাবার নাম মোহাম্মদ৷ আমার নাম রাখা হয়েছে সাওসান মোহাম্মদ শেবিল৷ আমার বড় ভাতিজার নাম মোহাম্মদ…আমরা সচেষ্ট থাকবো, যাতে মোহাম্মদ নামটি কখনো হারিয়ে না যায়৷”
লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পারিবারিক ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষক গাব্রিয়েলে রদ্রিগেস বলেছেন, ‘জার্মান প্রতিষ্ঠানটির করা প্রতিবেদনটি নবজাতকের নামকরণের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে৷জার্মানিতে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ার কারণে ‘মোহাম্মদ’ নাম বাড়ছে, এটা অনেকাংশে সত্যি৷ কিন্তু একই সঙ্গে এটিও বুঝতে হবে, আরব বিশ্বে প্রতিটি পরিবারে অন্তত একটি ছেলের নাম রাখা হয় মোহাম্মদ৷ মুসলিমদের নবি মোহাম্মদের সঙ্গে মিল রেখে নিজের সন্তানের নাম রাখতে চান অনেকেই৷’
রদ্রিগেস বলেন, জার্মান পরিবারগুলোর যেমন অনেক নাম থাকে বেছে সন্তানের নামকরণের জন্য৷ জার্মানিতেই প্রতি বছর অর্ধেকের বেশি শিশুর সম্পূর্ণ নতুন নাম রাখা হয়৷ আর সবচেয়ে জনপ্রিয় যে নামগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তা মোট জন্ম নেয়া শিশুর দুই থেকে তিন শতাংশ৷
রদ্রিগেস বলছেন, কিভাবে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে, এ বিষয়েও বিস্তারিত জানানো হয়নি৷ ফলে এ থেকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷ সংস্থাটির গবেষক ফ্রাউকে র্যুডেবুশ বলেছেন, ‘‘আমাদেরও মনে হয়েছে, ফলটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে৷”চ
রদ্রিগেস বলছেন, আপাত নির্দোষ এই প্রতিবেদনকে পরিপ্রেক্ষিত ছাড়া ব্যবহার করে ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানিতে বেশিরভাগ নবজাতকের নামই বাইরের দেশ থেকে আসা৷ ফলে জার্মানদের কানেরও কিছুটা অভ্যস্ততা প্রয়োজন৷”
তিনি বলেন, ‘‘শহর এলাকায় তেমন একটা সমস্যা নেই৷ কিন্তু অন্যান্য এলাকায় মানুষ এতে হুমকি বোধ করে৷ সেসব এলাকায় বিদেশিদের উপস্থিতিও খুব কম৷” শুধু নাম নয়, বিদেশিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে-কোনো বিষয়েই এই ভীতি কাজ করে বলে, আর এই ভয়কে পুঁজি করেই এএফডি ফায়দা লুটতে চাইছে বলেও মনে করেন তিনি৷
সুত্র: ডয়েচে ভেল