- আব্দুর রহমান রাশেদ
প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ইকরা ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ-এর আহ্বানে মাসিক শবগুজারী অনুষ্ঠিত হয়। শবগুজারির এই ইসলাহি মাহফিলে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত আল্লাহ-পাগলভক্তদের এক মধুর মিলনমেলা ঘটে। নিজের আধ্যাত্মিক অবস্থার উন্নতি সাধনে, ফানা-ফিল্লার অমিয় সূধা পানে নানান বয়সের নানান স্তরের মানুষ এতে উপস্থিত হন। কওমি ঘরানার মানুষ যেমন উপস্থিত হন, পিছিয়ে থাকেন না জেনারেল শিক্ষিত ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররাও। এলাকার দীনী মুসলিম ভাইয়েরা যেকোনো মূল্যে এতে অংশগ্রহণ করে ধন্য হতে মুখিয়ে থাকেন।
নির্ধারিত দিনে দুপুর পেরিয়ে বিকাল গড়াতেই আল্লাহ-পাগল ভক্তদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার মধ্যে প্রায় দুই তিনশো মুসল্লির সমাগম ঘটে। আধ্যাত্মিকতার এক নূরানী পরিবেশ বিরাজ করে চারপাশে। সবাই একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়ে লিপ্ত হয়। মনে হয় সুদীর্ঘকাল তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ছিলো। ‘আস সালামু আলাইকুম’, ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম’, ‘আল্লাহুম্মা যিদ মুহাব্বাাতি লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী’—সুমধুর মোহিত শব্দমালায় সেই বিচ্ছেদের ইতি ঘটে। আল্লাহর উদ্দেশ্যে মিলিত শত প্রাণে জান্নাতি উচ্ছাস ছেয়ে যায়।
মাগরিবের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আধ্যাত্মিকতার সবক চর্চা। সূরা ওয়াকিআ পাঠ পরবর্তী ছয় তাসবীহের আমলে পুরো মসজিদ গমগম করে। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- এর বজ্র ধ্বনীতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়। ‘আল্লাহু আকবার’-এর আওয়াজে হৃদয়ে রাব্বে কারীমের প্রেমের বীজ বুনে যায়। ইজতেমায়ী আমলে সর্বোত জান্নাতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমল শেষে সবার চোখে-মুখে এক নূরানী দ্যুতি স্পষ্ট অনুভূত হয়। ‘আরো চাই আরো চাই’ বলে এক ধরণের অব্যক্ত আকুতিও তাদেরকে ঘিরে রাখে।
সূরা ওয়াকিআ পাঠ পরবর্তী ছয় তাসবীহের আমলে পুরো মসজিদ গমগম করে। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- এর বজ্র ধ্বনীতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়।
ব্যতিক্রম ছিলো না গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) অনুষ্ঠিত হওয়া শবগুজারির মাহফিলও। সে রাতে নিয়মিত আমলে সময় কাটিয়েছেন আগত মুসল্লিগণ। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ থেকেও আল্লাহর পথের পথিকরা এসেছেন। আধ্যাত্মিকতার আমলে নিজেদের অন্তুরের পশুত্বকে বিলিন করার সাধনা করেছেন। রাতভর আমল—নামাজ, জিকির-আযকার, কুরআন তেলাওয়াতে ব্যাস্ত থেকে তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহকে খুঁজেছেন। শেষ রাত্রির রোনাজারিতে গুনাহখাতা মাফ করিয়েছেন। চোখের লোনা পানিতে মুখ ও দাড়ি ভিজিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। বাচ্চা কোনো শিশু মায়ের কাছে কান্না করে কোনো কিছুর বায়না ধরে—ঠিক তেমনি।
গত শবগুজারিতে তিনি মাদরাসা ছাত্রদের ইসলাহী মেহনতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। মাদরাসায় মাদরাসায় জিকিরের হালকা কায়েম করার জন্য জোর তাগিদ দেন। উপস্থিত মাদরাসার মুহতামিম সাহেবদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন। দেশের কওমী মাদরাসাগুলোয় আজকাল তারবিয়াত ও আমলের প্রতি উদাসিন দেখা যাচ্ছে। নিয়মিত জিকিরের দ্বারা তাদের মাঝে আমলের স্পৃহা ও মুতালার জাওক বৃদ্ধি পাবে ইনশা আল্লাহ।
যাবার আগে শায়েখের মুখনিসৃত অমূল্য নাসিহা সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন আল্লাহপ্রেমীগণ। আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেছেন—’জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আল্লাহ তাআলাকে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা মনে লালন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে-অবস্থায় তাঁরই সন্তুষ্টি মোতাবেক চলার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মনের ইচ্ছাধীন চলা যাবে না। আল্লাহ তাআলাকে পেতে হলে আগে নিজের নফসকে কাবু করতে হবে। ‘
গত শবগুজারিতে তিনি মাদরাসা ছাত্রদের ইসলাহী মেহনতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। মাদরাসায় মাদরাসায় জিকিরের হালকা কায়েম করার জন্য জোর তাগিদ দেন। উপস্থিত মাদরাসার মুহতামিম সাহেবদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন। দেশের কওমী মাদরাসাগুলোয় আজকাল তারবিয়াত ও আমলের প্রতি উদাসিন দেখা যাচ্ছে। নিয়মিত জিকিরের দ্বারা তাদের মাঝে আমলের স্পৃহা ও মুতালার জাওক বৃদ্ধি পাবে ইনশা আল্লাহ।
এদিকে শবগুজারিতে আগত মুসল্লিদের আরাম আপ্যায়ণে পূর্ণ ব্যবস্থাপনা আঞ্জাম দেয় ইসলাহুল মুসলিমীন পরিষদ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা। মেহমানদের দেখভালে স্বতস্ফূর্ত এগিয়ে আসে জামিআ ইকরার উস্তায-ছাত্ররাও। আল্লাহ সকলের এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। শবগুজারির এই বরকতময় পুন্যস্নাত রাতে বারবার উপস্থিত হয়ে আত্মশুদ্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক, সহ-সম্পাদক, পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম