পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর’ সন্দেহে পিটিয়ে তোফাজ্জল নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম তাদের আদালতে হাজির করেন। এরপর আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই ছয় শিক্ষার্থী হলো, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া; পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন; গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ; জিওগ্রাফির আল হুসাইন সাজ্জাদ এবং ওয়াজিবুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। চোর সন্দেহে ওই শিক্ষার্থীরা তাকে দফায় দফায় মারধর করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল শিক্ষার্থী ঢাবির হলে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করছে। তার হাতের ওপর লাঠি রেখে দুই শিক্ষার্থী লাফাতে থাকে। মারধরে তোফাজ্জলের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লে আবারও তাকে পেটানো হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার সময় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যায়। মোবাইল চুরির অভিযোগে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান।
পরে তোফাজ্জল মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্টাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।
তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে। তার মা-বাবা ও ভাই কেউ বেঁচে নেই।