তবে কি চাটখিলের জাহাঙ্গীরকে ইঙ্গিত করলেন প্রধানমন্ত্রী?

তবে কি চাটখিলের জাহাঙ্গীরকে ইঙ্গিত করলেন প্রধানমন্ত্রী?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেই দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে সবাই জানতে পারছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করে গেছে পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। এটা বাস্তব কথা। কী করে বানালো এই টাকা। যখন আমি জেনেছি, তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা তো হয়।’

রবিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব বলেন। গত ৮ থেকে ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

৯০ দশকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আসা দলীয় নেতাকর্মীকে পানি খাওয়ানোর কাজ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালী থেকে আসা এই জাহাঙ্গীরকে নেতাকর্মীরা তখন থেকে ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে চিনতেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর এক বিশেষ সহকারীর (বর্তমানে এমপি) মাধ্যমে গণভবনে যাতায়াতের সুযোগ পান জাহাঙ্গীর।

এর পর থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিতেন। এ পরিচয় দিয়ে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। করতেন নানা তদবির।

২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কাজ করছেন। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে বলা হয়। একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জাহাঙ্গীরের বিষয়ে হঠাৎ করে এমন সতর্ক বার্তায় বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধরার পর এগুলো চোখে আসে। তাছাড়া তো হয় না। যখনই ধরা পড়ে তখনই আমরা ব্যবস্থা নেই। এটা এক ধরনের মানসিকতা। আরেকটা কথা, সারাবিশ্বেই যে দেশটায় অর্থনীতিতে উন্নতি হয়, সেখানেই এ ধরনের কিছু অনিয়ম হয়, কিছু লোকের হাতে চলে যায় কিছু টাকা-পয়সা বানায়। তারা তো অপেক্ষা করে থাকে। যুগযুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসলে দুর্নীতি নিচের দিক থেকেই বেশি হচ্ছে। এটা হলো বাস্তবতা। দুর্নীতির উৎসমুখ কোন জায়গায় কোনটা, কয়টা খুঁজবে। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে, তাদের থামিয়েছি। এখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি। দুর্নীতবাজদের ধরছি। এটা চলতে থাকবে।

সরকারপ্রধান বলেন, অনেকে আমাকে বলেন, এটা করলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। আমি সেটা মনে করি না। যারা অপরাধ করছে, দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে; তাদের ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলাম। একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা বাদ দেওয়ার ফলে, ফরেন ক্যাডারে নারী মাত্র দুজন, আর পুলিশে নারী গেছে মাত্র চারজন৷ দেশের নারীরা কোনোদিন ডিসি-এসপি হবে এটা তো তারা ভাবতেই পারত না৷ প্রশাসনেও প্রথম সচিব বানিয়েছি আমি৷’

যারা বলেছিলেন নারী কোটা চাই না৷ তারা চাকরি পেয়েছেন কি না প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সব এলাকা বা জেলা তো একই রকম হয় না৷ ২৩ জেলায় পুলিশে কেউ জয়েন করেনি৷ মেডিকেল সেক্টরেও। মুক্তিযোদ্ধারা খুঁত ধরে তখন আদালতে মামলা করলেন৷’

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষনা করে হাইকোর্টের রায়ের পর কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন করছেন। সম্প্রতি তারা সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী) কোটা রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করার এক দফা দাবি তুলেছেন।

সবশেষ রবিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক দফা দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন রেখেছেন।

Related Articles