তাড়াইল ইজতেমা; ভালোবেসেছি যারে শত রূপে শত বার

তাড়াইল ইজতেমা; ভালোবেসেছি যারে শত রূপে শত বার

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

কওমী মাদরাসাগুলোয় চলছে শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়। কদিন পরেই সালানা ইমতেহান তথা বার্ষিক  পরীক্ষা। যে কারণে মাদরাসার উস্তাদগণ দরস- তাদরীস নিয়েই খুব ব্যস্ত। কারো যেন দম ফেলানোর সময় নেই।  বিশেষ করে যারা হাদীসের কিতাব পড়ান তারাতো একদম ফুরসতহীন।  সকাল- বিকাল  দরসের মসনদেই সময় কেটে যায় তাদের।  আমিও একজন শিক্ষক।  একটা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে খেদমত করে আসছি। কাজেই  সকল শিক্ষকদের মতো আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানাধীন বেলংকাতে জামিয়াতুল ইসলাহ আল মাদানিয়াহ ময়দানে বার্ষিক ইসলাহী ইজতেমার ডাক এসেছে। ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী ( রহঃ) এর খলিফা  আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাতবারাকাতুহুম এই ইজতেমার মূল তত্বাবধায়ক হিসাবে থাকেন। তারিখ  ২৬, ২৭, ২৮ জানুয়ারী। ইজতেমার তারিখ ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে এবার বাড়তি চাপ কাজ করছিল আমার মস্তিষ্কে। একদিকে হাদীসের কিতাব শেষ করতে হবে অন্য  তাড়াইলের ইজতেমাতে শরীক হতে হবে।

দুটি কাজের প্রতি আমার প্রেমাসক্তি। এক. প্রাণাধিক প্রিয় হাদীসের দরস। ইলমে হাদীসের শিক্ষক হিসেবে এর দারসে কোনো কোতাহী করতে পারি না। পেয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর প্রতি প্রেম – ভালবাসা।

দুই. তাড়াইল ইসলাহী ইজতেমা। প্রিয় শায়েখ ও মুর্শিদ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব দামাতবারাকাতুহুম এর ইসলাহ তথা সংশোধন হওয়ার ডাক। মানে দুটোতেই যেন প্রেমসুধা।   দুটো প্রোগ্রামই যেন আমাকে চুম্বুকের মত আকর্ষণ করছিল। কোনটাই যেন ছাড়তে পারিনা।

বহু চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে  হাদীসের দরসে বিরামহীন ভাবে যেন মশগুল হয়ে গেলাম।  আর কোন দিকে যেন চোখ ফেরাইনি। এভাবে দেখতে দেখতে চলে এল ২৬ জানুয়ারী।  তবে আজ তো আর বসে থাকার সময় নেই। দরসের যবনাকিপাত করেই তাড়াইলমুখী হয়ে গেলাম।

তাড়াইলে বেশীদিন ধরে আমার যাতায়াত নয়। মাত্র চারবছর। কিন্তু এ চারবছরে আমার যে মজা আর সুখানুভুতি হয়েছে বেলংকার ময়দান থেকে সেটা বর্ণনার ভাষা নেই। সেই তৃপ্তি এবং মজা  আস্বাদনে ২৬ জানুয়ারী ভোরের আলো ছড়ানোর সাথে সাথে ছুটে চললাম। রাজবাড়ি থেকে ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা তাড়াইল। তবে প্রেমের কাছে এই দুর্গম এবং দুর্ভেদ্য রাস্তা মোটেও বেশি নয়।

এ চারবছরে আমার যে মজা আর সুখানুভুতি হয়েছে বেলংকার ময়দান থেকে সেটা বর্ণনার ভাষা নেই

শাইখুল ইসলাম মাদানী ( রহ.) যখন মদিনা শরীফে হিজরত করে চলে যান, ঠিক দুই বছর পর সেই মদিনা থেকে একাকি হিন্দুস্তানে সফরে এসেছিলেন শুধুমাত্র প্রিয় শায়েখ ও মুর্শিদ রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহী ( রহ.) এর সঙ্গে দেখা করার জন্য। পাল তোলা জাহাজে সমুদ্রের অথৈজলরাশি পেরিয়ে হিন্দুস্তান পৌঁছেছিলেন। অনেক বিপদসংকুল ছিল সে যাত্রা। তারপরেও তাঁর সীসাহীন ত্যাগ ও ভালবাসায় সবকিছু ম্লান করে প্রিয় শায়েখ ও মুর্শিদের কদম ছুঁতে পেরেছিলেন।

মাওলানা মাদানীর সেই উত্তাল তরঙ্গ ভেদ করা  সফরের কাছে এটা কিছু নয়।  একটানা ৬ ঘণ্টা  গাড়ির চাকা ঘোরার পরে তাড়াইল পৌঁছলাম। এ যেন নিমেষেই পৌঁছে গেছি। হৃদয়ের টান,  প্রেমানুভূতি আর ভালবাসার ডালি নিয়ে হাজির তাড়াইলের দরজায়। প্রিয় শায়েখের খেদমতে নিজেকে সঁপে দিলাম।

এবার অবশ্য একা তাড়াইলে যাইনি। নতুন সফরসঙ্গী ছিল। যারা প্রিয় শায়েখের প্রতি শ্রদ্ধা- ভক্তির আবেশে সেখানে গিয়েছে। তারাও আমার সঙ্গে তাড়াইল ইজতেমার আমলে শরীক ছিল। সকাল – সন্ধ্যার প্রতিটি আমলে তারা যেন স্বাক্ষি হয়ে আছে। ফেরার পথে তাদের অনুভূতিটা এমনই। তাড়াইলে বারবার ফিরে যেতে চাই। এ যেন ভিন্ন এক স্বাদ ও তৃপ্তি লাভ করছি। এ মজা যেন আর কোথাও নেই। সত্যি তাড়াইল ইজতেমা যেন আমলের পরিবেশ। এমন প্রেমময় ইজতেমা আর কোথাও যেন নেই। কবির ভাষায় বলতে চাই, তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি

শত রূপে শত বার/জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার/ চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়

গাঁথিয়াছে গীতহার/ কত রূপ ধরে পরেছ গলায়/ নিয়েছ সে উপহার/ জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।

লেখক, শিক্ষক ও কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *