তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের : মাওলানা আরশাদ মাদানী

তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের : মাওলানা আরশাদ মাদানী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তাবলিগ জামাতের বিবদমান উভয়পক্ষই ‘হক-এর উপর রয়েছে’ মন্তব্য করে সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি, আমিরুল হিন্দ আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী।

তিনি বলেছেন, তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের, উভয়পক্ষই হক ও সত্যের উপর রয়েছেন। আমাদের উচিত কারো সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করা।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের খতমে বুখারি অনুষ্ঠানে আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী এসব কথা বলেন।

সায়্যিদ আরশাদ মাদানী বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ভ্রান্ত বলে অভিশাপ দেয়, তার ব্যাপারে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য হলো— ঐ ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে পথভ্রষ্ট না হলে বা অভিশাপের উপযুক্ত না হলে অভিশাপদাতার উপরেই তা পতিত হয়।

অতএব কেউ কাউকে কাফের বা ফাসেক বলে নিজের ইমান ও আখেরাতকে ধ্বংস করতে যাবেন না। যারা এতদিন এসব করেছেন তারা তওবা করুন। সবাই মুসলমান, সবাই নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন, মুমিন-মুত্তাকি।

তাবলিগের উভয়পক্ষের সঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দের সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাবলিগের দুইপক্ষের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। উভয়পক্ষই আমাদের দাওয়াত করেন, আমরা যাই, সময় ও সুযোগ হলে আমরাও উভয়পক্ষকে দাওয়াত করি, আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।

তাবলীগের মৌলিক কাজে দুইপক্ষের ইখতিলাফ ও মতপার্থক্য নেই। দু’পক্ষ একই মেহনত করে, দুপক্ষের জামাতই আল্লাহর রাস্তায় বের হয়। তাই আমরা বলি, কোনো একপক্ষকে ভালোবাসার কারণে অপরপক্ষকে কাফের বলা, পথভ্রষ্ট বলা ভয়ানক গুনাহ। এতে করে অন্যপক্ষ কাফের তো হবে না বরং যে ব্যক্তি এমনটা বলছে তার ইমানের উপরই এই শঙ্কা তৈরি হবে যে, সে নিজে কুফুরে নিপতিত হয়ে যায় কি না, নাঊযুবিল্লাহ।

কাফের বা ফাসেক বলে নিজের ইমান ও আখেরাতকে ধ্বংস করতে যাবেন না। যারা এতদিন এসব করেছেন তারা তওবা করুন। সবাই মুসলমান, সবাই নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন, মুমিন-মুত্তাকি।

-মাওলানা আরশাদ মাদানী

মাওলানা আরশাদ মাদানি আরও বলেন, যে ভুলভ্রান্তি হয়েছে সে ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে ফতওয়া চাওয়া হয়েছিল। আমরা ফতোয়া দিয়ে দিয়েছি। তিনি (মাওলানা সাদ) নিজের যেসব ভুল বা যে বিষয়গুলোকে তিনি সঠিক বলে মনে করতেন অথচ বাস্তবে সেগুলো সঠিক ছিল না —এসব বিষয়ে তিনি (মাওলানা সাদ) যখন বক্তব্যগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তখন সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: পেটে পাথর বেঁধে হলেও মুসলমানদের উচিত আগে নিজ সন্তানদেরকে শিক্ষিত করা: মাওলানা আরশাদ মাদানী

উভয়পক্ষকে সতর্ক করে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস বলেন, কেউ দুনিয়ার স্বার্থে আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না। অত্যন্ত আফসোসের সঙ্গে বলতে হচ্ছে— তাবলিগের বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে একপক্ষকে কাফের বলা, খুন-খারাবি করা নিজেদের ধ্বংস ছাড়া আর কোনো পরিণতি বয়ে আনবে না।

তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের কাছে আসে, কথা বলে, আমরা শুনি। আমাদের দাওয়াত করে, আমরা যাই, তাদেরও আমরা দাওয়াত করি।

বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, এমন মতবিরোধ দারুল উলুম দেওবন্দেও হয়েছে। ফলে আরেকটি দেওবন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মাজাহিরুল উলুমেও হয়েছে। এমনিভাবে অনেক মাদরাসায় মতবিরোধের কারণে নতুন নতুন মাদরাসা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় একটিকে সঠিক ধরে নিয়ে অন্যগুলোকে কাফের-পথভ্রষ্ট বলা নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ শাইখুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর পুত্র। বর্তমানে তাঁকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী আলেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে তাঁর অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রয়েছেন।

মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী ২০২০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের ‘সদরুল মুদাররিসীন’ ও ২০২১ সালে পঞ্চম ‘আমিরুল হিন্দ’ নির্বাচিত হন।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরোনো প্লাটফর্ম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে এ সংগঠনটির জন্ম। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দলটির ব্যাপক অবদান রয়েছে।

 

প্রকাশিত হলো আল্লামা মাসঊদ রচিত ‘আল্লাহর পরে শ্রেষ্ঠ যিনি’ গ্রন্থের ২য় খণ্ড

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *