তাবলিগের মুখোশে হিজরতের নামে সৌদি যাওয়ার সময় আটক ১৭ জেএমবি

তাবলিগের মুখোশে হিজরতের নামে সৌদি যাওয়ার সময় আটক ১৭ জেএমবি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা কৌশলে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে মিশে হিজরতের নামে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ।

সোমবার (৪ মে) রাতে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। মঙ্গলবার (০৫ মে) দুপুরে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ।

মঙ্গলবার (৫ মে) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এই জঙ্গিদের ধরতে অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটিটিসি ইউনিটের এডিসি তহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, ৪ মে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় কাকরাইল মসজিদের বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং এখনও সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গাজওয়াতুল হিন্দের নামে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অডিও-ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। গ্রেফতাররা তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে যুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন।’

এই রমজানেই ইমাম মাহাদী আসবেন। প্রথম ৩১৩ সেনার তালিকায় নাম ঢোকাতে যেতে হবে সৌদি আরব। প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাক মো আরমান খানের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে একদল আগেই দেশ ছেড়েছিল।

গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তারা পরস্পর যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাবলিগ জামাতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।

তাদের বলা হয়েছিল, করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে এক ধরনের গজব নেমে আসবে এবং সব কিছু ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তখন সীমান্তে কোনো পাহারা থাকবে না-এই সময় তারা যেন চলে আসেন।

এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন ভারতে যাওয়ার জন্য। তাদের আরও জানানো হয়, আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফেররা সবাই মারা যাবে, ইমানদারদের শুধু হালকা কাঁশি হবে। ইমাম মাহদির আগমন এই রমজানে সমাগত। তাই তারা যেকোনোভাবে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে মোতাবেক তারা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন।

দলটিতে ছাত্ররা ছাড়াও সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, চারজন প্রকৌশলী ও কৃষিবিদ রয়েছেন বলে জানান তিনি।

এডিসি তহিদ বলেন, ‘সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশে সৌদি গমন করে আর ফিরে আসেননি। এছাড়া বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও সাতজন ইমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দেশ্যে সৈাদি আরব হিজরত করেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান।’

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হায়দার আলী (৪৪), মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, জামিরুল ইসলাম (২৪), বিল্লাল হোসেন (৩৮), শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), সাইফুল ইসলাম (২৫), মোজাম্মেল হক (৩৩), শাহজালাল (৩৪), আক্তারুজ্জামান (৩০), মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), সোহাইল সরদার (৩৩), ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল (২৮) ও সোহাগ হাসান (২০)।

দলটিতে ছাত্ররা ছাড়াও সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, চারজন প্রকৌশলী ও কৃষিবিদ রয়েছেন বলে জানান এডিসি তহিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *