তাবলীগের দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র টঙ্গী

তাবলীগের দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র টঙ্গী

পাথেয় রিপোর্ট : শনিবার সকাল থেকেই তাবলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ক্রমে সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী ও কাকরাইরের মুরুব্বী মাওলানা জোবায়ের আহমদ-এর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

এসময় দুপক্ষের সংঘর্ষে ইজতেমা ময়দান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হন অন্তত দুই শতাধিক মুসল্লি।

পাঁচ দিনের জোর ইজতেমাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে এ সংঘর্ষ বাঁধে।

আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে বাড়ছে আহতের মিছিল। হাসপাতালের মেঝেতে রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতো সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানিয়েছে, আহতদের দেখবাল করা এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়েও আছে নানা শঙ্কা। পর্যাপ্ত পরিমাণের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না আহতরা।
সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে ভিড় বাড়ছে স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে। ইজতেমা ময়দানের চতুর্দিকের প্রবেশপথে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেককেই দেখা যাচ্ছে তারা ঝগড়া উসকে দিচ্ছে।

টঙ্গীর বাটা গেইট এলাকায় ইজতেমা ময়দানের প্রবেশপথে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধে। উভয় পক্ষের দফায় দফায় চলা সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপে উভয়পক্ষের দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। এতে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের সামনের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিমানবন্দর সড়কে দেখা দিয়েছে চরম যানজট।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় এক পক্ষের লোকজন অন্য পক্ষের সাথীদেরকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। অনেককে নির্মমভাবে পিটিয়ে শুইয়ে দেয়া হয়েছে। অনেককে দেখা গেছে লাঠির আঘাত খেয়ে জীবনে বাঁচতে চিৎকার করছে কিন্তু তাদেরকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি।

বিমানবন্দর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাদরাসা ছাত্র বলেন, আমরা লাঠালাঠি চাইনি। আমার বাবা সাদ সাহেবকে মানেন। আমি তো হুজুরকে মানি। হুজুর সাদ সাহেব বিরোধী। হুজুরের কথা শুনে এখানে এসেছি। কিন্তু এই লাঠালাঠি দেখে ভালো লাগছে না।

জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমার ঘোষণা দিলে মাওলানা জোবায়েরপন্থীরা এর বিরোধিতা করেন এবং জোড় ইজতেমা প্রতিহতের ঘোষণা দেন। এর আগেই মাওলানা জোবায়ের আহমদের সমর্থকরা ময়দানে অবস্থান নেন।

শনিবার সকালে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে গেলে ময়দানের প্রতিটি গেটে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে সাদ অনুসারীরা ময়দানে ঢোকার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের সাথীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

এতে দুইপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটার আঘাতে মো. সাইফুল ইসলাম (৪০), মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম (৫৫), হাফেজ আবু বক্কর (৩৫), মো. গোলাম কিবরিয়াসহ (৪২) অন্তত শতাধিক মুসল্লি আহত হয়ে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে জড়ো হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই মাথা, নাক ও পিঠে আঘাত পেয়েছেন।

টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন, এক সঙ্গে রক্তাক্ত জখমের এতো রোগী টঙ্গী হাসপাতালে আর আসেনি। আমরা সবাই মিলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।

এর আগে সকালে রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় তাবলিগ জামাতের সাদ ও জোবায়েরপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়।

প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ পরিচালিত জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচারিত হতে থাকে। এ বিষয়ে শনিবার সকালে জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের রইস মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ পাথেয় টোয়েন্টিফোরকে জানান, ইকরার সব শিক্ষার্থীরাই দরসে ছিলো। বাইরে কেথাও যাওয়ার অনুমতি ছিলো না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব খবর মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। শুক্রবার বিকেলে অসংখ্য তাবলিগের লোকেরা ইকরায় জড়ো হয়েছিল এবং সকালে তারা টঙ্গীর দিকে গিয়েছে এ সম্পর্কে মাওলানা মারুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি পাথেয় টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এটাতো মসজিদ কমিটির বিষয়। মাদরাসায় তো কেউ থাকেনি, তারা তো রাজধানীর অসংখ্য মসজিদেই ছিলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *