তাড়াইল ইজতেমার সাফল্য কামনা

তাড়াইল ইজতেমার সাফল্য কামনা

তাড়াইল ইজতেমার সাফল্য কামনা

আমিনুল ইসলাম কাসেমী

কিশোরগন্জের তাড়াইল বেলংকাতে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের ইসলাহী ইজতেমা আগামী ১২.১৩.১৪ ফেব্রুয়ারী – ২০২১ তিনদিন ব্যাপি চলবে। একবছর পুর্বে থেকে দাওয়াত পেয়েছি তাড়াইল ইজতেমার। তখন থেকে নিয়্যত করে বসে আছি। এবার যাবই ইনশাআল্লাহ।

ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর খলিফা, দারুল উলুম দেওবন্দের সুর্যসন্তান, তাজুল উলামা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব একজন তীক্ষ্ণ মেধাবী আলেমেদ্বীন। আলেমকুল শিরোমণি বলা যায় তাঁকে। সেই মহান ব্যক্তিত্ব প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলাতে ইজতেমা করে থাকেন। কদিন আগে খুলনা এবং ফরিদপুরের ভাঙায় হয়ে গেল তাঁর ইসলাহী ইজতেমা। এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন। মানুষকে দ্বীন মুখি করার প্রয়াস তাঁর। পথ ভোলা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান তিনি দিয়ে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে ঠিক ঐ রকম ইসলাহী ইজতেমা তিনি করে থাকেন প্রতিবছর। লাখো মানুষের সমাগম সেখানে হয়।দূর- দূরান্ত থেকে মানুষ সেখানে জমা হয়। মানুষকে তিনি দ্বীনের রাস্তায় আহবান করেন। যার দ্বারা মানুষের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

আল্লামা মাসঊদ সাহেবের এক সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত। তিনি একদম নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দ্বীনের জন্য যুহদ- মুজাহাদা তাঁর। কোন দুনিয়াবী আসবাব হাসিলের জন্য নয়। খালেছ দ্বীনি চিন্তা- চেতনা নিয়ে তিনি সামনে বাড়ছেন। মানুষকে দ্বীন মুখি করার জন্য অক্লান্ত মেহনত তাঁর।

আজকাল নিঃস্বার্থ ভাবে দ্বীনের কাজ করার লোকের অনেক অভাব। সবাই দুনিয়াবী মাকসাদ হাসিলের জন্য ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দ্বীনি কাজ করার লোক নেই। মানুষ ব্যক্তি স্বার্থের জন্য ময়দানে মেহনত করে যাচ্ছে। এভাবে আজ পুরো ময়দান স্বার্থান্নেষী মহলের হাতে।

তাছাড়া ওয়াজ মাহফিলগুলো আজ আগেরমত নেই। ওয়াজের ময়দানটা চলে গেছে এক শ্রেণীর ওয়াজ ব্যবসায়ীদের হাতে। ডাইরেক্ট চুক্তি আর ইনডাইরেক্ট চুক্তির কবলে ওয়াজ মাহফিল। রুহানিয়্যাত বিদায় নিয়েছে। ওয়াজে এখন মানুষের আগেরমত ফায়দা হয়না। বরং কোথাও কোথাও নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এছাড়া ওয়াজও নেই মাহফিলগুলোতে। মাহফিলে ওয়াজের পরিবর্তে চলে রাজনৈতিক মহড়া। কিছু বক্তা আছেন, তারা মঞ্চে বসে হুমকি,- ধমকি দেন মানুষকে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন ওয়াজের ষ্টেজে বসে। যার কারণে আজ ওয়াজ মাহফিলগুলো অনেক জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের যুগান্তকরী এক পদক্ষেপ। তিনি ইসলাহী ইজতেমার মাধ্যমে মানুষকে ছিরাতে মুস্তাকীমের উপর চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কোন ধরনের রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়। একদম খালেছ দ্বীনি কথার মাধ্যমে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া। কাউকে হুমকি- ধমকি দিয়ে নয়। কারো গীবত – সমালোচনা করে নয়। সহী কথা বলে থাকেন তিনি।

দাওয়াতে তবলীগের মেযায ঠিক রেখে। হেকমত- কৌশল এবং এবং মাওয়ায়েজে হাসানা তথা মিষ্টি কথার মাধ্যমে তিনি মানুষকে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। এমনিতে আল্লামা মাসঊদ সাহেব যেন কথার জাদুকর। তাঁর মিষ্টি কথায় যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এরপর কোরআন হাদীসের বয়ানতো তাঁর হৃদয় ছোঁয়া। যারা শুনেছে একমাত্র তাঁরাই বলতে পারবেন, কি যাদুমাখা বয়ান তাঁর। মানুষের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে যায়। পিপাসার্ত অন্তর তৃষ্ণা নিবারণ করে।

কারো হয়ত নানা ইশকাল থাকতে পারে তাঁর সম্পর্কে। কিন্তু আমি দেখেছি, যারা দূর থেকে নানা প্রশ্ন করে, নানা মন্তব্য করে, কিন্তু তাঁর কথা শুনলে আর কোন প্রশ্ন থাকে না। সব প্রশ্নের সমাধান হয়ে যায়।

অত্যন্ত ইখলাস – নিষ্ঠার সাথে তাঁর এই মিশন। মানুষকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসাই তাঁর মাকসাদ। যার দরুণ ব্যাপক ফায়দা লক্ষ্য করা যায়। মানুষ যেন সকল ক্ষোভ ভুলে যায়। হৃদয়ের কষ্ট- বেদনা দুর হয়। অনাবিল শান্তি আনয়ন করে তার মনের মাঝে। এক বেছাল আলোচক আল্লামা মাসঊদ সাহেব।

এখন থেকে প্রস্তুতি চলছে তাড়াইল ইজতেমা যাওয়ার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হুজুরের একান্ত ভক্ত- অনুরক্তগণ তৈয়ারী গ্রহণ করছেন। আমাদের রাজবাড়ী থেকে এক কাফেলা প্রস্তুত এবার তাড়াইল ইজতেমাতে যাওয়ার জন্য। জামাতবন্দী মানুষ ছুটবে এবার। পুরোদমে কাজ চলছে। আশাকরি বড় এক কাফেলা শরীক হবে। তাঁর বয়ান শুনে দুর করবে হৃদয়ের যাতনা।

যাইহোক, আগামী ১২.১৩.১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তাড়াইল ইজতেমা সফল হোক। মানুষের নিবির্ঘ্নে আসা-যাওয়া হোক। আল্লাহর দরবারে কবুল হোক। আমাদের শায়েখকে আল্লাহ তায়ালা সুস্থ রাখুন। এই কামনা করি। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *