পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানপ্রাণ মেহনতের পরেও তায়েফবাসীদের কেউ ইসলাম তো গ্রহণ করেইনি, এমনকি যে সাহায্য লাভের আশা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছিলেন, তা হলো না। উপরন্তু এরা তাঁকে তায়েফ থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করলো। এরা আশঙ্কা করছিল তিনি যদি এখানে অবস্থান করেন, তবে নওজোয়ানদের উপর তাঁর চরিত্র মাধুরিমা ও দাওয়াতের প্রভাব পড়ে যাবে। তাই তারা তাঁকে ডেকে বললো, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমাদের এলাকা থেকে বের হয়ে যাও।
লেলিয়ে দিলো গুণ্ডাদের
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভগ্ন হৃদয়ে একান্ত স্নেহাস্পদ যায়দ রা.কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন। কিন্তু এই নিষ্ঠুর দুরাচারীরা তাঁর পেছনে গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিলো, ছেলে-ছোকরাদের তাঁর বিরুদ্ধে উস্কে দিলো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন একান্ত সাথী যায়দ রা.কে নিয়ে যাচ্ছিলেন এই গুণ্ডা বদমাইশরা কেউ তাঁকে উপহাস করছিল, কেউ গালিগালাজ করছিল, তাঁকে নিয়ে মজা করছিল, হৈচৈ করছিল। সামনে-পিছনে, দু’পাশ থেকে পাথরের পর পাথর ছুড়ছিল। আঘাতে আঘাতে তাঁর বদন রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো। তিনি রক্তে রক্তে ভেসে গেলেন। মাঝে মাঝে আঘাতের চোটে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন। এই অবস্থায়ও পাষণ্ডরা তাঁকে হাত দিয়ে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে আবার ঢিল ছুড়ছিল। আর উল্লাসে ফেঁটে পড়ছিল। পায়ের না’ল মুবারক রক্তে টইটম্বুর হয়ে উঠলো। একান্ত আশিক হযরত যায়দ রা. নিজের শরীরকে ঢাল বানিয়ে পরম প্রিয় মাহবুবকে রক্ষা করতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু একা তিনি কী করবেন। জন নেই, মানুষ নেই, সহমর্মী নেই, চতুর্দিকে কেবল পাথর আর পাষণ্ড পশুদের অট্টহাসি। হযরত যায়দেরও মাথা, শরীর আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে গেলো।
কোনোক্রমে আল্লাহর রাহের এই অসহায় দুই পথিক শহর ছেড়ে বের হলেন, পাষণ্ডরা যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে করে ফিরে গেলো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মারাত্নকভাবে আহত, ক্লান্ত, শ্রান্ত। সারা শরীর মুবারক রক্তে জবজবে। পাশেই দেখা গেলো একটা আঙ্গুর বাগান। একটু ছায়ায় বিশ্রামের আশায় হযরত যায়দ রা.কে তিনি সেখানে ঢুকে পড়লেন।
অত্যাচারে নির্যাতনে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসাড় হয়ে পড়েছিলেন। হযরত যায়দ নিজে জখমি ও আহত থাকা সত্বেও প্রিয়তম মাহবুবের অসাড় দেহ মুবারক কাঁধে তুলে নিলেন। আঙ্গুর বাগানে নিয়ে গিয়ে সেবা দিয়ে তাঁকে কিছুটা সুস্থ করে তুললেন।
আল্লাহর দরবারে কাকুতিময় নিবেদন
কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে পাকসাফ হয়ে তিনি দুই রাকাআত নামায পড়লেন। পরে মহামহিম দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাত উঠালেন। দুআ করলেন,
‘হে আল্লাহ, অনুযোগ করছি আমি তোমার কাছেই আমার সামর্থ্যের দুর্বলতার, আমার কৌশলের স্বল্পতার এবং লোক সমাজে আমার তুচ্ছতার, আমার দীনতার। ওগো আরহামুর রাহিমীন, দয়ালু শ্রেষ্ঠ, তুমি তো প্রভু, মালিক দুর্বল করে-রাখাদেরও, তুমিই তো পরওয়ার, কার কাছে সোপর্দ করছো তুমি আমাকে? দূরবর্তী এমন জনপদের হাতে যাদের চেহারা রোষায়িত, আমাকে দেখলে কালো ছায়া পড়ে যাদের মুখে, আমার প্রতি রুক্ষ কর্কশ! নাকি দুশমনদের মালিক বানিয়ে দিচ্ছো আমার বিষয়ে। আমার উপর যদি তোমার অসন্তুষ্টি না থাকে, আমি বিরাগভাজন না হই তোমার, তা হলে তো কিছুরই পরওয়া করি না আমি। তবে তোমার আফিয়াত ও নিরাপত্তা আমার জন্য অধিকতর প্রশস্তময়, আরও স্বাচ্ছন্দময়।
প্রভু হে, আশ্রয় লাভ তোমারই আননের নূর ও জ্যোতিরাশির, যার বিভার ওসীলায় আলোক-উদ্ভাসিত হয় তমসাচ্ছন্ন আঁধার, যার উপর নির্ভর করে দুনিয়া ও আখিরাতের শুদ্ধতা ও ত্রুটিহীনতা। আমার উপর যেন নিপতিত না হয় তোমার রোষ, নেমে যেন না আসে আমার উপর তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ, আমি তো কেবল তোমার সন্তুষ্টিই মাগতে থাকবো, যাবত না তুমি খুশি হয়ে গেছো। ফিরে যাওয়ার ও আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই, কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই, তোমার ওসীলা বিনে। ‘
কী মর্মস্পর্শী আকুতিময় নিবেদন। এত নিষ্ঠুর নির্যাতন যারা করলো কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সকল অনুযোগ নিজের অক্ষমতা ও দুর্বলতার। ইনসানে কামিল হওয়ার পরও এই যে বিনয়ের পরাকাষ্ঠা, এর কি তুলনা আছে কোথাও?
‘আল্লাহর পরে শ্রেষ্ঠ যিনি‘ গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত
‘রকমারী’ থেকে ৩৫% ছাড়ে সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন