অভিবাসীরদের আকাঙ্ক্ষার অন্যতম শীর্ষের জায়গা হলো ইউরোপ। ইউরোপের যে কোনো দেশের যাওয়ার জন্য জীবনঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না অনেকে। কোনোভাবে একবার ইউরোপে পা ফেলতে পারা মানে যেন নিশ্চিত আর সুখের জীবন। এমন আশা আর স্বপ্ন নিয়ে ইউরোপে প্রবেশের পর ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ইনফোমাইগ্রেন্টসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ইউরোপে প্রবেশের পর ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়েছেন। এসব শিশু অভিভাবকহীন ছিলেন। এ হিসাব অনুসারে গড়ে নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় ৪৭ জন শিশু।
কয়েকটি সংবাদামাধ্যমের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘লস্ট ইন ইউরোপ’ শীর্ষক গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইউরোপে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে থাকার ৫১ হাজার ৪৩৩ শিশু ও কিশোর নিখোঁজ হয়েছেন। এসব শিশু কিশোর সঙ্গীহীন ছিলেন।
২০২১ সালের এক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে মাসব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে এ প্রতিবেদন করা হয়। ওই গবেষণায় বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপে ১৮ হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়।
অনুসন্ধান বলছে, ইউরোপে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে গত তিন বছরে ২২ হাজার ৮৯৯ শিশু নিখোঁজ হয়েছেন।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া। দেশটি থেকে ২০ হাজার ৭৭ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এরপর রয়েছে জার্মানি। দেশটি থেকে দুহাজার ৫ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ড থেকে এক হাজার ২২৬ জন শিশু নিখোঁজের তথ্য মিলেছে।
অনুসন্ধানের পর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে নিখোঁজ অভিবাসীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কেননা পুরো তথ্য পাওয়া অনেক কঠিন। এ ছাড়া অনেক দেশ নিখোঁজ শিশুদের কোনো তথ্যই সংগ্রহ করে না।
শিশুদের নিখোঁজ ও শোষণ প্রতিরোধে কাজ করছে নেটওয়ার্ক মিসিং চিলড্রেন ইউরোপ। সংগঠনের মহাসচিব আহি ইফেন বলেন, নিখোঁজের এ পরিসংখ্যন খুবই উদ্বেগজনক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র কমিশনার ইলফা ইয়োহানসন শিশু নিখোঁজের এ হারকে ভঙ্গুর অভিবাসন ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংশ্লিষ্ট শিশুরা মানবপাচারকারীদের শিকার হতে পারে।
মিসিং চিলড্রেন ইউরোপের মতে, অভিবাসী শিশু ও শরণার্থীরা পাচারকারীদের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
মিসিং চিলড্রেন ইউরোপের মতো শিশু সুরক্ষা সংস্থাগুলো বলছে, সঙ্গীহীন অভিবাসী শিশু ও শরণার্থীরা সহজেই প্রভাবিত হওয়ার এবং পাচারকারীদের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সংগঠনের মহাসচিব সিএনএনকে বলেন, ইউরোপে আসা অনেকে ঋণ পরিশোধ বা পাসপোর্ট এবং প্রিয়জনকে জিম্মি রাখার কারণে মানবপাচারকারীদের হাতে শোষণের শিকার হন।
ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি শিশু ইউরোপ পৌঁছাতে গিয়ে শারীরিক সহিংসতার শিকার হন।