পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রত্যেকটিই ‘মা’-ই সন্তানের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে আলাদা ও পরম নির্ভরতা এবং অাশ্রয়ের জায়গা হয়ে থাকেন অামৃত্যু। তা জীবনের যে কোনও পরিস্থিতেই। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ অধিবেশনে কোনো শিশু তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগ দিল। মাত্র তিন মাস আগে জন্ম নেওয়া নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মেয়ে হলো সেই প্রথম শিশু। মায়ের সঙ্গে জাতিসংগ পর্যন্ত চলে গেছেন তিন মাস বয়সী এই দুধের শিশু। জেসিন্ডা আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় সরকারপ্রধান, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মা হয়েছেন। এর আগেও আরেকজন প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রথম মা হয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো। তবে ভিন্ন রাজনৈতিক পরিবেশ ও দেশীয় রাজনৈতিক সমসস্যার কারণে বেনজির ভুট্টো তা প্রকাশ করতে পারেননি। তাই এক প্রধানমন্ত্রী মা সানন্দে বিশ্ববাসীকে তাঁর মাতৃত্বের সুসংবাদ দিতে পারলেও অপরজনকে তা গোপন রাখতে হয়েছিল।
২৫ আগস্ট মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রথমবারের মতো জেসিন্ডার ভাষণের কথা জানানো হয় দেন। জেসিন্ডাই প্রথম ব্যক্তি, যিনি শিশুসন্তান নিয়ে এই অধিবেশনে যোগ দিলেন। সবকিছুর পরও মাতৃত্বই যেখানে বড় হয়ে এসেছিল তার কাছে। তাই ভাষণের আগে তিন মাস বয়সী মেয়ে নেভ তে আরোহার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য আদরে–দুষ্টুমিতে মেতে ছিলেন জেসিন্ডা। চুমু দিয়ে সন্তানকে সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে বসিয়ে ভাষণ দিতে যান তিনি।
গত ২১ জুন মেয়ে জন্ম দেওয়ার পর ছবিটি টুইটারে প্রকাশ করেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। সবে তিন মাস পেরিয়েছে,শিশু নেভ এখন মায়ের দুধ খায়। এই কারণে আন্তর্জাতিক এই সফরে তাকে সঙ্গে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না প্রধানমন্ত্রী মায়ের। তাই মায়ের আান্তর্জাতিক সফরের সঙ্গী হলেন তিন মাস রয়সি মেয়ে।অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মায়ের বৈঠকের সময়ও বাবার কোলে পরম যত্নেই ছিল সে।
কোলের শিশু হলে কী হবে, জাতিসংঘে প্রবেশের জন্য নিয়মকানুন মেনে তাঁর জন্যও পরিচয়পত্র ইস্যু করতে হয়েছে। নেভের বাবা গেফোর্ড মেয়ের ছবি লাগানো জাতিসংঘের সেই পরিচয়পত্রের ছবি এবং জাতিসংঘে মেয়েকে নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা টুইটারে দিয়ে লিখেছেন, ‘টুইটারে সবাই নেভের জাতিসংঘের পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছে। এটিই সেটি। আহা, গতকাল নেভের ন্যাপি পাল্টানোর মাঝামাঝি সময়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করা জাপানের প্রতিনিধিদলের অবাক হওয়া চাহনির ছবি যদি তুলতে পারতাম!’
টুইটারে মেয়ের জাতিসংঘের পরিচয়পত্রটির ছবি প্রকাশ করেন বাবা ক্লার্ক গেফোর্ড।জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে ডুজারিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা দেখিয়েছেন, কর্মজীবী মায়ের চেয়ে আর কেউ নিজের দেশকে এত ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। বিশ্বনেতাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ নারী। তাই যতটা সম্ভব নারীদের নেতৃত্বকে স্বাগত জানানো প্রয়োজন।’
নিউজিল্যান্ডের নিউজহাবকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডে বেশির ভাগ সময় নেভ আমার সঙ্গে থাকে।’ ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে তিনি কাজে যোগ দিয়েছেন আগস্ট মাসে। সন্তানকে দেখভালের জন্য তাঁর সঙ্গী টেলিভিশন উপস্থাপক গেফোর্ড এখন বাড়িতেই থাকছেন।
নিউজিল্যান্ড হেরার্ল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গীর খরচ তিনি বহন করছেন। নেভের দেখভালের জন্যই নেভের বাবাকে সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।
আধুনিক ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রথম মা হয়েছিলেন পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মাতৃত্বের বিষয়টি নিজ দেশসহ বিশ্ববাসী স্বাগত জানালেও প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রথম মা বেনজির ভুট্টো এমন অভ্যর্থনা পাননি। দেশটির সামরিক অর্থায়নে পরিচালিত কট্টর ডানপন্থী জোটের কারণে তাঁকে মাতৃত্বের বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছিল। ১৯৯০ সালে তিনি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। কখনো তিনি তাঁর এই মা হওয়ার বিষয় প্রকাশ করেননি এবং মাতৃত্বকালীন ছুটিও নেননি। ব্যক্তিগত গাইনি চিকিৎসকের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর তিনি দ্রুত কাজে যোগ দেন। এর কয়েক মাস পর তাঁর সরকারকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর অন্য দুই সন্তানকেও একই পরিস্থিতির মধ্যে জন্ম নিতে হয়েছিল। বেনজির ভুট্টো দেখিয়েছিলেন, মাতৃত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই একই সঙ্গে চালানো সম্ভব।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বরে বেনজির ভুট্টোর নির্বাচনী সমাবেশের মিছিলে গুলিবর্ষণের পরপর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা করা হয় দেশটির সে সময়কার শক্তিশালী ও জনপ্রিয় এই প্রধানমন্ত্রীকে।