পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল-আইএমএফ; যা আগামী দুই দিনের মধ্যে যোগ হওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে পর্ষদ সভায় তা অনুমোদন করার তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি আগামী দুই দিনের মধ্যে এ পরিমাণ অর্থ ছাড় করলে বুঝে পাবে বাংলাদেশ।’’
এবারের কিস্তিতে ঋণের পরিমাণ আগেই দুইবারের চেয়ে বেশি। এর আগে গত ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। প্রথমবার অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে ছাড় হয় ওই অর্থ।
অনেক দেনবার এবং সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ার শর্তে ২০২৩ সালে মোট ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (৪৭০ কোটি ডলার) দিতে সম্মত হয় সংস্থাটি।
এরপর দফায় দফায় বৈঠক ও সফর শেষে সংস্কার কাজ পর্যবেক্ষণের পর প্রতিটি কিস্তির অর্থ ছাড় করছে আইএমএফ।
এবার তৃতীয় কিস্তিতে মোট ইসিএফ (এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি) ও ইইএফ (এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার (আইএমএফ মুদ্রা এসডিআর ৭০ কোটি ৪৭ লাখ) এবং আরএসএফ (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ২২ কোটি ডলার (এসডিআর ১৬ কোটি ৬৮ লাখ) পাবে বাংলাদেশ। তিন খাত মিলিয়ে মোট এক দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হবে এ কিস্তিতে।
তবে চুক্তির শুরুতে যে পরিকল্পনা ছিল, তাতে এবার বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর বদলে ইসিএফ ও ইইএফ এর বরাদ্দ দ্বিগুণ করে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার করা হয়েছে। এভাবে মোট মঞ্জুর করা ঋণের মধ্যে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সবশেষ গত ৮ মে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার এবং শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে রিভিউ মিশন গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে।
রিভিউ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও সফর শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “আমরা আনন্দিত যে দ্বিতীয় কিস্তির অধীনে বাস্তবায়নকৃত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের রিভিউ সম্পন্ন করেছি। কর্মকর্তা পর্যায়ে আমরা ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছি, যা আগামী সপ্তাহে নির্বাহী পর্ষদের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে ছাড় করা হবে।”
তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে জুন শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রাখার শর্ত দেয় সংস্থাটি, যা আগের শর্তে ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। অন্যান্য শর্তে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয় তারা।
নতুন শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ ও ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।
ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
এগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের নিট হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মত বিষয় রয়েছে।